তীব্র তোপের মুখে ইসরায়েল
ফিলিস্তিনের গাজার রাফায় একটি শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় বইছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তীব্র তোপের মুখে পড়েছে ইসরায়েল।
গত রোববার দিবাগত রাতে রাফায় ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষিত একটি শরণার্থীশিবিরে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। তাল আস-সুলতান এলাকায় তাঁবু দিয়ে গড়ে তোলা শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলের এই হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ২৫০ জন। হামলার পর শরণার্থীশিবিরের তাঁবুগুলোয় আগুন ধরে যায়। এতে অনেকে জীবন্ত পুড়ে মারা যান।
অনেক আরব দেশ এ ঘটনাকে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ হিসেবে বর্ণনা করে ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) বাধ্যতামূলক আদেশ মেনে অবিলম্বে রাফায় অভিযান বন্ধে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বৈশ্বিক সম্প্রদায়।
সমালোচনার মুখে ইসরায়েল বলেছে, এই ‘দুর্ঘটনা’ ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এর প্রভাব তারা খতিয়ে দেখছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তদন্ত শুরু কথার কথা জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজায় কোনো নিরাপদ স্থান নেই। এই ভয়াবহতা অবশ্যই থামাতে হবে।
কূটনীতিকেরা বলেছেন, এই হামলার বিষয়ে আলোচনার জন্য আজ মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ একটি জরুরি অধিবেশন আহ্বান করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক মুখপাত্র বলেছেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সম্ভাব্য সব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ইসরায়েলি হামলার কড়া সমালোচনা করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের এক মুখপাত্র। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ওয়াফাকে তিনি বলেছেন, এই হামলা ইসরায়েলের সীমা অতিক্রমকারী হত্যাযজ্ঞ।
ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা দেশ মিসর ও কাতার। পাশাপাশি অন্যান্য আঞ্চলিক সরকারগুলোও কঠোর ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের হামলার নিশানা করার নিন্দা জানিয়েছে মিসর। দেশটি বলেছে, এটি ইসরায়েলের একটি পদ্ধতিগত নীতির অংশ, যার লক্ষ্য গাজায় মৃত্যু ও ধ্বংসের পরিধি প্রসারিত করা, যাতে উপত্যকাটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
কাতার একে আন্তর্জাতিক আইনের বিপজ্জনক লঙ্ঘন বলে নিন্দা করেছে। দেশটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলা চলমান মধ্যস্থতা-প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলবে।
‘চলমান যুদ্ধাপরাধের’ জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করেছে জর্ডান। সৌদি আরবও গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হত্যাযজ্ঞের নিন্দা করেছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ‘বর্বর ও খুনিদের’ জবাবদিহির আওতায় আনার অঙ্গীকার করেছেন। বলেছেন, এ জন্য সামর্থ্যের মধ্যে সবকিছু করবেন।
আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ার মুসা ফাকি মাহামত বলেছেন, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে চলেছে। দুই দিন আগে রাফায় সামরিক পদক্ষেপ বন্ধের আদেশ দিয়ে আইসিজে যে রায় দিয়েছেন, তার অবমাননা করেছে ইসরায়েল।
ক্ষোভ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেন, ‘এ অভিযান বন্ধ করতে হবে। রাফায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য কোনো নিরাপদ জায়গা নেই।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, রাফায় অভিযান বন্ধে ইসরায়েলকে অবশ্যই আইসিজের আদেশ মেনে চলতে হবে।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বায়েরবক বলেছেন, আইসিজের আদেশ বাস্তবায়নের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ইসরায়েলকে অবশ্যই তা মেনে চলতে হবে।