দুবাইয়ে এমন বন্যার কারণ কি কৃত্রিম বৃষ্টি না অন্য কিছু
স্মরণকালের রেকর্ড বৃষ্টিপাতে নজিরবিহীন বন্যা দেখা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই শহরে। বন্ধ হয়ে গেছে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। ২৪ ঘণ্টার অস্বাভাবিক বৃষ্টিতে এমন রেকর্ড বন্যার পর কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি নামানো নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।
গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া এই বৃষ্টিপাত কতটা অস্বাভাবিক ছিল এবং এ ধরনের ভারী বর্ষণের কারণ কী ছিল, সে বিষয়ে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেছে বিবিসি।
কতটা ভারী বর্ষণ হয়েছিল
আমিরাতের উপকূলীয় শহর দুবাই। এটি সচরাচর রুক্ষ এলাকা হিসেবে পরিচিত। যদিও এখানে সারা বছরে গড়ে ১০০ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত হয়, মাঝেমধ্যেই ভারী বর্ষণও হয়ে থাকে।
দুবাই থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আল-আইন শহরে ২৪ ঘণ্টায় ২৫৬ মিলিমিটার (১০ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
উপসাগরীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ধরন পর্যবেক্ষণ করেন ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের আবহাওয়াবিদ মার্টিন আম্বাউম। এই ভারী বর্ষণের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘বিশ্বের এই অংশটি সাধারণত দীর্ঘদিন বৃষ্টিহীন থাকে। তবে অনিয়মিত, ভারী বৃষ্টি হয়ে থাকে। এরপরও এটা ছিল সবচেয়ে বিরল বৃষ্টিপাতের ঘটনা।’
জলবায়ু পরিবর্তন কী ভূমিকা রেখেছিল
এই বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন কতটা ভূমিকা রেখেছিল, এখনই তা সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। এতে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিষয়গুলোর পূর্ণ বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন রয়েছে। এতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
তবে এই বৃষ্টিপাতের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ধারার সামঞ্জস্য রয়েছে। সাধারণত তুলনামূলক বেশি উষ্ণ বাতাস অধিক পরিমাণে আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে। প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অতিরিক্ত প্রায় ৭ শতাংশ আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে, যা বৃষ্টির তীব্রতা বাড়াতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের জলবায়ুবিজ্ঞানের অধ্যাপক রিচার্ড অ্যালেন বলেন, ‘বৃষ্টিপাতের তীব্রতা নতুন রেকর্ড গড়েছে। কিন্তু জলবায়ুর উষ্ণতার সঙ্গে এর যোগসূত্র আছে। ঝড় সৃষ্টিতে এবং ভারী বৃষ্টি ঝরাতে আর্দ্রতার পরিমাণ যত বাড়বে, এর সঙ্গে যুক্ত বন্যাও ক্রমশ শক্তিশালী হবে।’
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন অব্যাহত থাকায় চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ আমিরাতের বেশির ভাগ এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০ শতাংশ বাড়বে।
কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর ভূমিকা ছিল কি
কয়েক দশক ধরে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানোর ইতিহাস আছে আমিরাতের। উড়োজাহাজ বা ড্রোন দিয়ে সিলভার আয়োডাইডের মতো ক্ষুদ্রকণা নিক্ষেপ করে মেঘে আর্দ্রতাকে ঘনীভূত করার মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি নামানো হয়।
তবে দুবাইয়ে বন্যা শুরু হওয়ার পরপরই কয়েকজন সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারকারী তড়িঘড়ি করে ভুল তথ্য দেন। তাঁরা বলেন, বন্যার কারণ সাম্প্রতিক কৃত্রিম বৃষ্টির চেষ্টা।
এর আগে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি নামানোর জন্য রোববার ও সোমবার উড়োজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে মঙ্গলবার অর্থাৎ বন্যার দিন হয়নি।
অবশ্য কোন সময় কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানোর ঘটনাটি ঘটেছে, তা আলাদাভাবে যাচাই করে দেখতে পারেনি বিবিসি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঝড়ের ক্ষেত্রে এটার সামান্য প্রভাব থাকতে পারে। কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানোর বিষয়টি সামনে আনাটা ‘বিভ্রান্তিকর’।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ুবিজ্ঞানের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ফ্রেডেরিক অটো বলেন, ‘এমনকি যদি দুবাইয়ে কৃত্রিম বৃষ্টি পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েও থাকে, তবে আগে থেকেই মেঘ সৃষ্টির জন্য পানি বহন করার মতো পরিবেশ সেখানে বিরাজমান ছিল।’
উষ্ণ হতে থাকা জলবায়ুর সঙ্গে এর সামঞ্জস্য রয়েছে। কেননা এতে করে ঝড় ও ভারী বৃষ্টি ঝরানোর মতো আর্দ্রতা জমছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে বন্যার ঝুঁকি।
বিবিসির আবহাওয়াবিদ ম্যাট টেইলর বলেন, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার বিষয়ে আগে থেকেই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। এর আগে কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে ২৪ ঘণ্টায় এক বছরের সমান বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাষ পাওয়া গিয়েছিল।