ইসরায়েলে হামাসের হামলার বর্ষপূর্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের রকেট হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলের আসকালানের একটি সড়কে পুড়ে যাওয়া গাড়ি থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছেফাইল ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে সোমবার (৭ অক্টোবর)। এ হামলার জের ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় এখনো ইসরায়েলের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ চলছে। এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে উত্তেজনা।

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এ উত্তেজনাকে পুঁজি করে হামাসের হামলার বর্ষপূর্তিতে উগ্রপন্থীরা সহিংস ঘটনা ঘটানোর ইন্ধন জোগাতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই এবং ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) এক যৌথ ঘোষণায় ওই সতর্কতা জারি করেছে।

সংস্থা দুটি বলেছে, এ পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট বা বিশ্বাসযোগ্য হুমকি শনাক্ত করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। তবে হামাসের হামলার বর্ষপূর্তি সামনে রেখে ও পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে বিদেশি ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর’ সহিংসতার ডাকের পরিপ্রেক্ষিতে এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ সতর্কতার পেছনে আরও কিছু বিষয় কাজ করেছে। সেগুলো হলো, লেবাননে হিজবুল্লাহর প্রধান কার্যালয়ে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা ও এর জবাবে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হামলার ঘটনা।

সিএনএনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার বর্ষপূর্তি ও ইহুদি নববর্ষ উৎসবকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ সংস্থাগুলো দেশজুড়ে ইহুদি ও মুসলিম প্রতিষ্ঠানগুলোতে টহল জোরদার করেছে।

নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি) আগামী সোমবার দিনটিকে কেন্দ্র করে টহল বাড়িয়েছে। আইন প্রয়োগকারী একটি সংস্থা সিএনএনকে এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্রটি বলেছে, আগামী দুই সপ্তাহ এমন টহল ও নজরদারি বজায় রাখা হতে পারে। এ সময়ে পুলিশ সেতু ও সুড়ঙ্গগুলোতে বিস্ফোরক শনাক্ত করতেও কাজ করবে। এ ছাড়া হেলিকপ্টার ইউনিট ব্যবহার করা হবে তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তের জন্য।

লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, গত সপ্তাহ থেকেই তারা টহল বাড়িয়েছে। তল্লাশিচৌকিগুলোয় নতুন করে পুলিশ কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ানো, গাড়ি মোতায়েন ও অশ্বারোহী ইউনিট মোতায়েন করা হবে। শিকাগো, মায়ামি ও ফিলাডেলফিয়ার পুলিশও টহল বাড়িয়েছে।

যৌথ ঘোষণায় এফবিআই ও ডিএইচএস বলেছে, সিনাগগ, মসজিদ বা ইসলামিক সেন্টার এবং কমিউনিটি সেন্টারসহ ইহুদি, মুসলিম ও আরব প্রতিষ্ঠানগুলো, স্মারক, আইনানুগ বিক্ষোভসহ বড় গণজমায়েত বর্তমানে সহিংস হামলার জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় লক্ষ্যবস্তু। ঘোষণায় আরও বলা হয়, ‘আপনার আশপাশ সম্পর্কে সব সময় সজাগ থাকুন। সন্দেহজনক কোনো কার্যকলাপ চোখে পড়লে কর্তৃপক্ষকে জানান।’

সংস্থাগুলোর অনুমান, বিদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েল, হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইরানে চলমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। আর এ বিষয়টি একক হামলাকারীদের যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেও সহিংসতা ঘটাতে সহায়তা করতে পারে।

নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো সিএনএনকে বলেছে, তথাকথিত ‘একক হামলাকারীরা’ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অংশ হিসেবে থাকে না। তারা আইন প্রয়োগকারীদের ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়।

একটি সূত্র বলেছে, সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা তাদের ওপর নজরদারি করার সুবিধা পাই। কিন্তু একক হামলাকারী কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করা অনেক কঠিন। কেননা, এমন ব্যক্তি তার আক্রমণের পরিকল্পনা জানাতে কাউকে কোনো বার্তা পাঠায় না।