ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন এক নারী। গতকাল তেহরানেছবি: এএফপি

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবার ত্রিমুখী লড়াই দেখা গেল। গতকাল শুক্রবার দেশটিতে স্থানীয় সময় সকাল আটটা থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে চলে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। গত মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত হওয়ার পর ইরানে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। বিশ্লেষকেরা মূলত এবারের নির্বাচনকে ত্রিমুখী লড়াই হিসেবেই দেখছেন।

এবারের নির্বাচনে দুজন কট্টরপন্থী রক্ষণশীল প্রার্থী হলেন ইরানের পরমাণু চুক্তির মধ্যস্থতাকারী জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাইদ জালিলি ও পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ। তাঁদের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছেন সংস্কারপন্থী প্রার্থী মাসুদ পেজেশকিয়ানের। তিনি মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তির আলোচনায় ইরানকে আবার ফেরাতে চান।

নির্বাচন ত্রিমুখী বলা হলেও নির্বাচনে আরও একজন প্রার্থী রয়েছেন। তিনি হচ্ছেন ধর্মীয় নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোস্তফা পুরমোহাম্মদি। নির্বাচনে ছয়জনকে প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দিয়েছিল ইরান কর্তৃপক্ষ। পরে দুজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।

নিয়ম অনুযায়ী, ইরানে আগামী বছরের জুনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট হওয়ার কথা ছিল; অর্থাৎ ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের চার বছরের মেয়াদ শেষে ভোট অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু গত ১৯ মে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হলে প্রেসিডেন্ট পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে আগাম নির্বাচনের বিকল্প ছিল না। সংবিধান অনুযায়ী, ৫০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ইরানে গত কয়েকবারের নির্বাচনের মতোই এবারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই গণনা শুরু হয়েছে। আজ শনিবার জানা যাবে কে হচ্ছেন দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের প্রেসিডেন্টের ভূমিকা বড় করে দেখা হলেও দেশের প্রকৃত ক্ষমতা থাকে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার হাতে। ধারণা করা হচ্ছে, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ কেউ এই নির্বাচনে জয় পাবেন।

আশা হারাচ্ছেন না সংস্কারপন্থী প্রার্থী পেজেকশিয়ান। তিনি বলেন, ইসরায়েল ছাড়া সব দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান তিনি।

ইরানে এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়া ধর্মীয় নেতা মোস্তাফা পুরমোহাম্মদির বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে অবশ্য সারিবদ্ধ হয়ে লোকজনকে ভোট দেওয়ার বিষয়টি দেখানো হয়। তবে দিনের শুরুতে এপিসহ অন্য সংবাদমাধ্যমগুলো বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটারদের খুব বেশি উপস্থিতি দেখতে পায়নি। দেশটির ৪৯ বছর বয়সী শিক্ষক মাহমুদ দারেহি বলেন, তিনি দেশটির সাবেক হার্ট সার্জন ও সংস্কারপন্থী প্রার্থী মাসুদ পেজেশকিয়ানকে ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি ২০০৫ সালের পর প্রথমবার ভোট দিলাম। তাঁর মতে, পেজেশকিয়ান দেশের সমস্যা সমাধান করতে ও মার্কিন চাপ প্রতিহত করতে পারবেন। আরেক ভোটকেন্দ্রে বোরকা পরা দুই সন্তানের মা মরিয়ম (৩২) বলেন, তিনি এবারের নির্বাচনে রক্ষণশীল প্রার্থী সাইদ জালিলিকে ভোট দিয়েছেন। প্রার্থীদের মধ্যে তিনি একমাত্র পরিচ্ছন্ন।

তেহরানের দোকানদার ৩৭ বছর বয়সী আরিয়া রাহিমি বলেন, তিনি পার্লামেন্টের স্পিকার বাঘের গালিবাফকে ভোট দিয়েছেন।