তুরস্কে কারাবন্দী ইমামোগলু বিরোধীদলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত, চলছে এরদোয়ানের ধরপাকড়

তুরস্কের ইস্তাম্বুলের কারাবন্দী মেয়র একরেম ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে দাঙ্গারোধী পুলিশের সামনে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছেন এক বিক্ষোভকারী। ইস্তাম্বুল, ২৩ মার্চ ২০২৫ছবি: এএফপি

তুরস্কের ইস্তাম্বুলের কারাবন্দী মেয়র একরেম ইমামোগলুকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী মনোনীত করেছে। আজ সোমবার দলের একজন মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন। ২০২৮ সালে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

এমন এক পরিস্থিতিতে সিএইচপি ইমামোগলুকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঘোষণা করল, যখন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রশাসন বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড় অব্যাহত রেখেছে। পাঁচ দিনে দেশজুড়ে ১ হাজার ১৩৩ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গত রোববার প্রার্থী বাছাইয়ে ভোটাভুটির আয়োজন করে সিএইচপি। ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করায় দলীয় প্রাইমারিতে সাধারণ মানুষকেও ভোট দেওয়ার সুযোগ দেয় দলটি। এতে প্রায় দেড় কোটি মানুষ ভোট দিয়েছেন, যাঁদের ১ কোটি ৩২ লাখের বেশি দলটির সদস্য নন। অবশ্য এই ভোটাভুটিতে ইমামোগলুই একমাত্র প্রার্থী ছিলেন।

ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলু
ফাইল ছবি: রয়টার্স

সিএইচপি দেশটির পার্লামেন্টের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। ইমামোগলুকে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহযোগিতার অভিযোগে বুধবার ইমামোগলুকে আটক করা হয়। তাঁর মুক্তির দাবিতে বুধবার রাত থেকে রাজধানী আঙ্কারা, প্রধান শহর ইস্তাম্বুলসহ বিভিন্ন শহরে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন।

এরপর দুর্নীতি মামলায় গতকাল রোববার ইমামোগলুকে আনুষ্ঠানিকভাবে কারাগারে পাঠান ইস্তাম্বুলের একটি আদালত। ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে বিরোধী দল ‘রাজনৈতিক ক্যু’ আখ্যায়িত করেছে।

তুরস্কের ইস্তাম্বুলের কারাবন্দী মেয়র একরেম ইমামোগলুর মুক্তির দাবিতে রাস্তায় এক বিক্ষোভকারী। তিনি আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের ছবি সংবলিত একটি স্কার্ফ দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছেন। তাঁর চশমায় তুর্কি ভাষায় লেখা হয়েছে ‘বিপ্লব’। ইস্তাম্বুলের বেসিকতাস জেলায়, ২৪ মার্চ ২০২৫
ছবি: এএফপি

এদিকে ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল পঞ্চম রাতের মতো দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় গণহারে ধরপাকড়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে বার্তা সংস্থা এএফপির একজন ফটোসাংবাদিকসহ ১০ সাংবাদিকও রয়েছেন।

অধিকার সংগঠন এএলএসএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইস্তাম্বুলসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহের সময় ১০ সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে।

মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সিটি হলের বাইরে বিক্ষোভ। একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করার পর এমন বিক্ষোভ হচ্ছে প্রতিদিন
ছবি: এপি

আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে কারাগারে পাঠানোর পর ইমামোগলুকে মেয়রের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছে। গতকাল দিবাগত রাতটা ইস্তাম্বুলের উপকণ্ঠে সিলিভরি কারাগারে কেটেছে তাঁর। নিজের আইনজীবীদের মাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমি একটি সাদা জামা পরেছি, যে জামায় তোমরা দাগ লাগাতে পারবে না। আমার একটি শক্তিশালী হাত রয়েছে, যা তোমরা মচকাতে পারবে না। আমি সামান্যতমও মাথা নত করব না। এই লড়াইয়ে আমি জয়ী হব।’

ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে ফ্রান্স। গতকাল দিনের শেষ দিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইমামোগলুকে কারাগারে প্রেরণের ঘটনা ‘গণতন্ত্রের ওপর মারাত্মক আঘাত’।

আরও পড়ুন