২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

গাজায় ফেলা হয়েছে ৩২ হাজার টন বিস্ফোরক, অর্ধেক বাড়িঘর ধ্বংস

গাজার উত্তরাঞ্চলের অনেক এলাকা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী
ছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনের গাজায় এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলের বিরামহীন হামলায় অর্ধেকের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রায় ৪০ হাজার বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এক বিবৃতিতে গাজার তথ্য মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে। এর আগে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি গত বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, এক মাসে গাজায় ৫০ শতাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।

সহকারী মহাসচিব ও আরব রাষ্ট্রের জন্য জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির আঞ্চলিক ব্যুরোর পরিচালক আবদুল্লাহ আল দারদারি এবং পশ্চিম এশিয়ার অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের নির্বাহী সচিব রুলা দাশতি গত বৃহস্পতিবার এক যেৌথ সংবাদ সম্মেলনে গাজার এক মাসের ধংসযজ্ঞের এ চিত্র তুলে ধরেন।

এ বিষয়ে গতকাল গাজার তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, আবাসন ও অবকাঠামো খাতের প্রতিটিতে ২০০ কোটি ডলার করে ক্ষতি হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও দাবি করা হয়, ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পর গাজায় এ পর্যন্ত ৩২ হাজার টন বিস্ফোরক ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি জানিয়েছে, এই যুদ্ধের বিধ্বংসী প্রভাব পড়তে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের অর্থনীতির ওপর। এই এক মাসের যুদ্ধের ফলেই ফিলিস্তিনের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৪ দশমিক ২ শতাংশ কমতে পারে। যুদ্ধের আগের হিসাবের সঙ্গে তুলনা করে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আর দ্বিতীয় মাসের পুরোটা জুড়ে যদি যুদ্ধ চলতে থাকে, তাহলে জিডিপি কমতে পারে দ্বিগুণ তথা ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। ফিলিস্তিনে দারিদ্র্যের হার ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে আরও ৫ লাখের বেশি লোক দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষের মুখে পড়বে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিম তীর ও গাজায় ৩ লাখ ৯০ হাজার ফিলিস্তিনি চাকরি হারিয়েছেন। কত সময় ধরে এই সংঘাত চলবে, সেটার ওপর নির্ভর করে দারিদ্র্যের হার ২০ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

আরও পড়ুন

অনেক বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন: ব্লিঙ্কেন

বিবিসি জানায়, গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার ৩৫তম দিনে এসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, অনেক বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। ‘বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ক্ষতি কমাতে’ আরও কিছু করা প্রয়োজন।

ভারতের নয়াদিল্লিতে গতকাল সাংবাদিকদের ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘অনেক বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বিগত সপ্তাহগুলোতে অনেক বেশি ফিলিস্তিনি দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে গেছেন। তাঁদের ক্ষতি কমিয়ে আনতে এবং মানবিক সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে আমরা সম্ভাব্য সবকিছু করছি।’

কাফনের কাপড়ে মোড়া সন্তানের মরদেহ কোলে কান্নায় ভেঙে পড়েন এক ফিলিস্তিনি বাবা
ছবি: এএফপি

এমন সময় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানি নিয়ে কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যখন গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতালে বোমাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। আল-শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আল-রানতিসি শিশু হাসপাতালসহ চারটি হাসপাতাল ঘিরে ফেলেছে ইসরায়েলি ট্যাংক।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

এদিকে গাজায় স্থল অভিযানে অংশ নেওয়া আরও দুই সেনা নিহত হয়েছেন বলে ইসরায়েল জানিয়েছে। এ নিয়ে স্থল অভিযানে ৪১ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হলেন। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলার পর মোট ৩৫৪ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন।

আরও পড়ুন

‘হামলায় বিরতির লক্ষণ নেই’

বিবিসির এক প্রতিবেদনে গতকাল বলা হয়েছে, উত্তর গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কয়েক ঘণ্টার বিরতি দেওয়ার লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। যদিও আগের দিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বেসামরিক লোকজনকে সরে যেতে সুযোগ করে দেওয়ার দিনে চার ঘণ্টা করে হামলায় বিরতি দিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল।
কয়েক ঘণ্টার এই বিরতিকে ‘বড় ধরনের অগ্রগতি’ বলে দাবি করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে শিগগিরই যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন তিনি।

তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে এলাকাভিত্তিক কিছু সময়ের জন্য কৌশলগত বিরতি দেওয়া হবে। কোনো যুদ্ধবিরতি নয়।

একই সময়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি শাখা থেকে বলা হয়েছে, উত্তর গাজার বেসামরিক লোকজন যাতে দক্ষিণে সরে যেতে পারে, সে জন্য ছয় ঘণ্টার জন্য করিডর খুলে দেওয়া হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ করিডর খোলা থাকবে।

আরও পড়ুন