পৃথক দুই রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে ফিলিস্তিন সংকটের সমাধানের লক্ষ্যে বৈঠকে বসেছেন আরব বিশ্বের নেতারা। আজ সোমবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আন্তর্জাতিক এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পাশাপাশি লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চলমান সামরিক সংঘাত বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ দেওয়া নিয়ে আলোচনা হবে আরব-ইসলামিক এ শীর্ষ সম্মেলনে।
গাজা যুদ্ধ বন্ধ ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে গত অক্টোবরের শেষদিকে রিয়াদে আরব নেতাদের একটি সম্মেলন হয়। সেই সম্মেলন শেষে নভেম্বরের শুরুতেই আবার সম্মেলনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের আগ্রাসন আরব ও মুসলিম বিশ্বের নেতাদের জরুরি এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে।
সম্মেলন প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ, বেসামরিক মানুষজনকে রক্ষা, ফিলিস্তিন ও লেবাননের নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানো, নিজেদের অবস্থান নিয়ে ঐকমত্য তৈরি, চলমান হামলা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ তৈরির পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে কীভাবে টেকসই শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফেরানো যায়, সেসব নিয়েই আলোচনা হবে সম্মেলনে।
সৌদি প্রেস এজেন্সি জানায়, সম্মেলনে যোগ দিতে রোববার সন্ধ্যায় রিয়াদে পৌঁছেছেন নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা তিনুবু ও লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফেরও সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা। তবে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ততার কারণে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সম্মেলনে থাকবেন না।
আজ সোমবার সম্মেলনের উদ্বোধনীতে বক্তব্য দেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি বলেন, আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইল কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে প্রত্যাখ্যান করছি।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ‘বাস্তবসম্মত’ নয়
দুই রাষ্ট্র সমাধান নিয়ে রিয়াদে সম্মেলন শুরুর মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কোনো বাস্তবসম্মত লক্ষ্য হতে পারে না।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গিডিয়ন সার বলেন, ‘আমার মনে হয় আজকের দিনে এসে এটা কোনো বাস্তবসম্মত অবস্থান নয়। আমাদের অবশ্যই বাস্তববাদী হতে হবে। আর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে সেটা হবে হামাসের রাষ্ট্র।’
এবার গাজার পশ্চিমে স্থল হামলা
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার পশ্চিম অংশে স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল সোমবার পশ্চিম গাজার নুসেইরাত শরণার্থীশিবিরে ট্যাংক পাঠিয়েছে ইসরায়েল। ট্যাংক থেকে ছোড়া গোলায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন।
উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছেন, ট্যাংক নিয়ে ইসরায়েলের সেনারা শরণার্থীশিবিরে ঢুকতে শুরু করলে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জাইক মোহাম্মদ নামের একজন বলেন, ‘শরণার্থীশিবিরে ট্যাংক হামলার বিষয়টি ছিল অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত। ট্যাংক এলে আতঙ্কে সবাই দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। তবে অনেকেই আটকা পড়েন। এ সময় শরণার্থীশিবির থেকে বের হওয়ার জন্য অনেককে ইসরায়েলি সেনাদের কাছে আকুতি জানাতে দেখা যায়।