ইয়েমেনে ব্যাপক হামলা ইসরায়েলের
ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও বন্দরনগরীতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়।
ইসরায়েলের ওপর আরও হামলা চালাতে হুতিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস।
ফিলিস্তিনের গাজা ও পশ্চিম তীর, লেবানন ও সিরিয়ার পর এবার মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ ইয়েমেনে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে নয়জন নিহত হয়েছেন বলে ইয়েমেনের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। জবাবে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি করেছে হুতি।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে ইয়েমেনের ‘সামরিক স্থাপনায়’ হামলা চালানোর কথা জানায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। হুতি বিদ্রোহীদের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের।
এ বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র দানিয়েল হাগারি বলেন, হুতি বিদ্রোহীদের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী সানা, বন্দর ও জ্বালানি অবকাঠামো রয়েছে।
হুতি-ঘনিষ্ঠ টেলিভিশন চ্যানেল আল মাশিরাহ জানায়, গতকাল ভোরের দিকে সানা ও বন্দরনগরী হোদেইদাহতে আগ্রাসী অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল। সানার দুটি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা হয়েছে। এ ছাড়া হোদেইদাহর বন্দরে শত্রুপক্ষ অন্তত চারটি হামলা চালিয়েছে। দুটি জ্বালানি স্থাপনায় হামলা হয়েছে।
ইসরায়েলি হামলায় নয়জন নিহতের খবর জানিয়েছে আল মাশিরাহ চ্যানেল। তাঁদের মধ্যে বন্দরনগরী সালিফে সাতজন এবং রাস ইশা জ্বালানি অবকাঠামোয় বাকি দুজন নিহত হন। দুটি জায়গাই ইয়েমেনের পশ্চিমাঞ্চলের হোদেইদাহ প্রদেশে অবস্থিত।
পাল্টা হামলা হুতিদের
এদিকে ইসরায়েলে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর দাবি করেছে হুতি বিদ্রোহীরা। হুতি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি বলেন, তেল আবিবের কাছে জাফা এলাকায় ‘দুটি সুনির্দিষ্ট ও স্পর্শকাতর সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে ইয়েমেন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার কথা জানানো হয়েছে। তেল আবিবের দক্ষিণে একটি বিদ্যালয়ের ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পড়ে নাকি সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভবনটি বিধ্বস্ত হয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে সামরিক বাহিনী। এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ ছাড়া জেরুজালেমে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট ভবন নেসেট-এর কাছে ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার পর সেখানে এসব ধ্বংসাবশেষ পড়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে ইয়েমেনে ইসরায়েলের হামলার ঘটনাকে ‘বিপজ্জনক পরিস্থিতি’ বলে মন্তব্য করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। একই সঙ্গে ইসরায়েলের ওপর আরও হামলা চালাতে হুতিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ‘আমরা এই উসকানিকে বিপজ্জনক পরিস্থিতি এবং ফিলিস্তিনি জনগণ, সিরিয়া ও আরব অঞ্চলে চালানো আগ্রাসনের বিস্তার হিসেবেই দেখছি।’ একই সঙ্গে ইসরায়েলে আরও হামলা চালাতে হুতিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাসের সামরিক শাখা কাসেম ব্রিগেডস।
‘মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে ইসরায়েল’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, গাজায় সুপেয় পানি সরবরাহ করতে না দিয়ে হাজারো ফিলিস্তিনিকে হত্যার মাধ্যমে ইসরায়েল গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূলের কাজ করছে।
এক প্রতিবেদনে গতকাল এইচআরডব্লিউ বলেছে, ‘গাজায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানোর অংশ হিসেবে এই নীতি নেওয়া হয়েছে। এর মানে জাতিগত নির্মূলের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করছে ইসরায়েলি সরকার, যা এখনো চলমান। ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় এই নীতি “গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডের” শামিল।’
সংবাদ সম্মেলনে এইচআরডব্লিউর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের পরিচালক লামা ফকিহ বলেন, ‘আমরা যা দেখতে পেয়েছি সেটা হলো, বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করতে না দিয়ে ইসরায়েলি সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার ফিলিস্তিনি হত্যা করছে।’