গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হচ্ছে, সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান

যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আগে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে গাজা–ইসরায়েল সীমান্তের কাছে বেশ কিছু ট্যাংক পার্ক করে রাখা হয়েছে। ১৮ জানুয়ারিছবি: রয়টার্স

গাজাবাসীর জন্য বহুল প্রতীক্ষিত দিন আজ রোববার। আজ সকাল থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে গাজায় দীর্ঘ ১৫ মাস ধরা চলা রক্তক্ষয়ের অবসান হতে যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতায় সহায়তাকারী কাতারের পক্ষ থেকে গতকাল শনিবার এ তথ্য জানানো হয়। এতে আরও মধ্যস্থতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও মিসর।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারী এক্সে এক বিবৃতিতে বলেন, চুক্তির পক্ষ এবং মধ্যস্থতাকারীদের সমন্বয় অনুসারে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি শুরু হবে ১৯ জানুয়ারি রোববার গাজার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে।

মাজেদ আল-আনসারী আরও বলেন, ‘আমরা গাজার বাসিন্দাদের সাবধানতা ও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার এবং সরকারি সূত্র থেকে নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছি।’

গতকাল ইসরায়েলের জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুমোদন পায়। এর আগে টানা ছয় ঘণ্টা বৈঠক করেন নেতানিয়াহু সরকারের মন্ত্রীরা। নেতানিয়াহুর দপ্তরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার চুক্তির (ফ্রেমওয়ার্ক) অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েল সরকার। আজ থেকে এটা কার্যকর হবে।

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি ঠিক কখন শুরু হবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি। তবে বলা হয়েছে, আজ স্থানীয় সময় বেলা দুইটার আগে কোনো বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে না।

পুরো দায়িত্ব নেবেন মাহমুদ আব্বাস

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গত শুক্রবার বলেন, যুদ্ধপরবর্তী গাজার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত।

প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট আব্বাসের নির্দেশে ফিলিস্তিনি সরকার গাজার পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বাস্তুচ্যুতদের প্রত্যাবর্তন, মৌলিক পরিষেবা প্রদান, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ডের পুনর্গঠন।

২০০৭ সাল থেকে গাজার দায়িত্বে থাকা হামাসের প্রতিদ্বন্দ্বী আব্বাসের নেতৃত্বাধীন এই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। পশ্চিম তীরের দায়িত্বে থাকা ফাতাহ গোষ্ঠী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষে যুক্ত। হামাস ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। হামাসের পক্ষ থেকে এখন বলা হচ্ছে, যুদ্ধপরবর্তী গাজায় তারা দায়িত্ব নেবে না। হামাসের সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, বেসামরিক কার্যক্রমের দায়িত্ব তারা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে দিতে প্রস্তুত।

যুদ্ধ-পরবর্তী ফিলিস্তিনের দায়িত্ব কার কাছে যাচ্ছে, তা নিয়ে ইসরায়েল কোনো অবস্থান নেয়নি। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ও তাদের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলে আসছেন, ফিলিস্তিনের দায়িত্ব যে-ই নিক না কেন, ৭ অক্টোবরের হামলাকারীদের জন্য তা পুরস্কার হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত সপ্তাহে বলেন, ফিলিস্তিনের দায়িত্ব মাহমুদ আব্বাসের হাতেই যাবে।

তিন ধাপে কার্যকর

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এই হামলায় ১ হাজার ২০০ জনের বেশি নিহত হন। জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় আড়াই শ জনের বেশি মানুষকে। তাঁদের মধ্যে অনেককে মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, গাজায় হামাসের কাছে এখনো ৯৮ জন জিম্মি জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় রয়েছেন।

হামাসের হামলার দিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজা কর্তৃপক্ষের হিসাবে, এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৮৯৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো মানুষ।

আজ যে যুদ্ধবিরতি শুরু হচ্ছে, তা তিন ধাপে কার্যকর করা হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপ হবে ছয় সপ্তাহের। এ সময় ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এর বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী থাকা ১৯ বছরের কম বয়সী নারী ও শিশুদের মুক্তি দেওয়া হবে। এ সময় গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর একটি অংশকে সরিয়ে নেওয়া হবে।

এরপর শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপ। এই ধাপে ইসরায়েলের বাকি জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস। এর বিপরীতে আরও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে। গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়া হবে। আর তৃতীয় ধাপে ইসরায়েলের কাছে মৃত জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে। গাজা পুনর্গঠন শুরু হবে।