কেউ রাজনীতিবিদ, কেউ ব্যবসায়ী, কেউবা সমাজসেবায় ব্রতী রয়েছেন। তবে তাঁদের সাধারণ পরিচয়, তাঁরা সবাই নারী, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী। প্রতিবছরের মতো এ বছরও মার্কিন প্রভাবশালী সাময়িকী ‘ফোর্বস’ বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে। প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য সেই তালিকা থেকে শীর্ষ ১০ ক্ষমতাধর নারীর নাম–পরিচয় তুলে ধরা হলো।
গত দুই বছরের মতো এবারও বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন। ৬৬ বছর বয়সী উরসুলা ২০১৯ সাল থেকে এ পদে রয়েছেন। তিনি ইসির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। গত জুলাইয়ে আরও পাঁচ বছরের জন্য ইসির প্রেসিডেন্ট হয়েছেন উরসুলা। এখন অখণ্ড ইউরোপীয় জোটের গণতন্ত্র সুসংহত করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এর আগে উরসুলা ২০০৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে সর্বশেষ ছয় বছর ছিলেন জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা লাগার্দে। প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০১৯ সালে তিনি ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিয়োগ পান। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে যাত্রায় ইউরোপীয় মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কাজ করছেন ৬৮ বছর বয়সী ক্রিস্টিনা। এর আগে ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ছিলেন। ওই পদেও ক্রিস্টিনা ছিলেন প্রথম নারী।
জর্জিয়া মেলোনি ইতালির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। ২০২২ সালের ২২ অক্টোবর ইতিহাস গড়ে দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। ৪৭ বছর বয়সী মেলোনি ইতালির ডানপন্থী ব্রাদার্স অব ইতালি পার্টির প্রেসিডেন্ট। ২০২৩ সালের নভেম্বরে ইতালিতে সাংবিধানিক সংস্কারে নেতৃত্ব দেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা কমিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী পদে সরাসরি নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবাউম। ৬২ বছর বয়সী ক্লদিয়া ২০২৪ সালের জুনে ইতিহাস গড়ে দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। দায়িত্ব নেন গত অক্টোবরে। এর আগে ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি মেক্সিকো সিটির মেয়র ছিলেন। পেশায় বিজ্ঞানী ক্লদিয়া জ্বালানি প্রকৌশলীতে পিএইচডি করেছেন।
মেক্সিকো সিটিতে ইহুদি পরিবারে ক্লদিয়ার জন্ম। সেই হিসাবে তিনি মেক্সিকোর প্রথম ইহুদি প্রেসিডেন্টও বটে।
বিশ্বখ্যাত মার্কিন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জেনারেল মোটরসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ম্যারি বারা। ৬২ বছর বয়সী ম্যারি ২০১৪ সাল থেকে এ পদে আছেন। ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে বিভিন্ন পদে কাজ করে আসছেন এ নারী। উচ্চাভিলাষী চালকবিহীন গাড়ি নির্মাণ প্রকল্প এগিয়ে নিচ্ছেন তিনি। ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ মোট ১০ লাখ চালকবিহীন গাড়ি নির্মাণ করতে চায় ম্যারির কোম্পানি। তিনি ওয়ার্ল্ট ডিজনি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদেও রয়েছেন।
বোস্টনভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফিডেলিটি ইনভেস্টমেন্টসের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) অ্যাবিগেইল জনসন। ৬২ বছর বয়সী এই নারী ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পারিবারিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি। বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ শেষ করে তিনি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানেই পেশাজীবন শুরু করেছিলেন।
জুলি সুইট বৈশ্বিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এক্সেঞ্চারের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এ পদে আছেন তিনি। এর আগে প্রতিষ্ঠানটির উত্তর আমেরিকার আঞ্চলিক প্রধান ছিলেন তিনি। জুলির বয়স ৫৭ বছর।
৬০ বছর বয়সী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস পিভোটল ভেঞ্চারের প্রতিষ্ঠাতা। এ বছরের জুনে তিনি বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাইন্ডেশনের কো–চেয়ারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। সাবেক স্বামী ধনকুবের বিল গেটসের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর এমন সিদ্ধান্ত নিলেও ফাউন্ডেশনের পদ ছাড়ার বিষয়ে কিছুই জানাননি তিনি। দাতা ও সমাজসেবী হিসেবে মেলিন্ডার খ্যাতি রয়েছে।
আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের সাবেক স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি স্কটকে একজন খ্যাতিমান সমাজসেবী ও লেখক হিসেবে পরিচয় দিয়েছে ফোর্বস। ২৫ বছর সংসার করার পর ২০১৯ সালে বেজোস ও ম্যাকেঞ্জির বিচ্ছেদ হয়। ওই সময় বেজোসের মোট সম্পদের ৪ শতাংশ পান এ নারী। তাঁর বয়স ৫৪ বছর।
বিশ্বখ্যাত সিটি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেন ফ্রাসের। ৫৭ বছর বয়সী জেন ২০২১ সালের মার্চে এই প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্ব নেন। তিনি প্রতিষ্ঠিত ও নামী এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম নারী সিইও। সেই সঙ্গে ওয়ালস্ট্রিটের প্রভাবশালী কোনো ব্যাংকের প্রথম নারী প্রধান তিনি।