মাটির বেশ ওপর দিয়ে যেমন মেট্রোরেল চলে, তেমনি মাটির নিচে ভূগর্ভ দিয়েও মেট্রোরেল চলাচল করে। এটাকে পাতালরেলও বলে। স্বাভাবিকভাবে মেট্রোস্টেশনগুলোও হয় ভূগর্ভে। তবে কিছু কিছু স্টেশন মাটির এতটাই নিচে যে দেখলে অবাক হতে হয়। আসুন, বিশ্বের বুকে সবচেয়ে গভীরে অবস্থিত ১০টি মেট্রোস্টেশন সম্পর্কে একনজরে জেনে নিই—
হংইয়ানকুন স্টেশন চীনে অবস্থিত। দেশটির ইউঝং এলাকার চংকিং রেল ট্রানজিটের ৯ নম্বর লাইনে রয়েছে এই স্টেশন। হংইয়ানকুন স্টেশনের গভীরতম অংশটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১১৬ মিটার বা ৩৮১ ফুট নিচে। এর মধ্য দিয়ে এটা বিশ্বের সবচেয়ে গভীরে অবস্থিত মেট্রোস্টেশনের স্বীকৃতি পেয়েছে। স্টেশনটি চালু হয় ২০২২ সালে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে এই স্টেশনের সঙ্গে ৫ নম্বর লাইন সংযুক্ত করা হয়। যাত্রীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য এখানে পর্যাপ্ত এস্কেলেটর, সমতল এস্কেলেটর (চলমান হাঁটার পথ) রয়েছে। ফটক থেকে প্ল্যাটফর্ম অবধি যেতে সময় লাগে ৮ মিনিট।
উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে রয়েছে দুই লাইনের এই মেট্রো। এর লাইনগুলো মাটির ১১০ মিটারের বেশি বা প্রায় ৩৬০ ফুট নিচে। স্টেশনগুলো শুধু মেট্রোরেল চলাচলের জন্য নয়, বরং শত্রুপক্ষের বোমা থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। ১৯৬৫ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। শাসক কিম ইল সাংয়ের নেতৃত্বে শেষ হয় পর্যায়ক্রমে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে। পিয়ংইয়ং মেট্রোতে মাটির ওপরে কোনো স্টেশন নেই।
ইউক্রেন এখন যুদ্ধকবলিত দেশ। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করছে দেশটি। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রয়েছে বিশ্বের তৃতীয় গভীরতম মেট্রোস্টেশন, যা আর্সেনালনা নামে পরিচিত। এটার অবস্থান ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০৫ দশমিক ৫ মিটার বা প্রায় ৩৪৬ ফুট গভীরে। ভিন্নধর্মী নির্মাণশৈলীর কারণে যাত্রী ও পর্যটকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় কিয়েভের মেট্রোস্টেশন। ২০২২ সালে যখন রুশ বাহিনী কিয়েভে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে, তখন বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচতে এই স্টেশনকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
এটিও যুদ্ধকবলিত দেশ ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯৬ দশমিক ৫ মিটার বা ৩১৭ ফুট নিচে এর অবস্থান। চালু হয় ১৯৮৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। কিয়েভের নানা প্রাচীন নিদর্শনে সাজানো এই স্টেশন। রয়েছে স্বতন্ত্র নকশার নির্মাণশৈলী। ইউরোপের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন মেট্রোস্টেশন ধরা হয় এটিকে। ২০২২ সালে রুশ বাহিনীর সর্বাত্মক বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচতে এই স্টেশনও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
চীনের চংকিংয়ের জিয়াংবেই এলাকায় অবস্থিত হংতুদি মেট্রোস্টেশন। এই স্টেশনের অবস্থান ভূমি থেকে ৯৪ দশমিক ৪৭ মিটার বা প্রায় ৩০৯ দশমিক ৯ ফুট নিচে। চংকিং রেল ট্রানজিটের ৯ ও ১০ নম্বর লাইন চলাচল করে এই স্টেশন হয়ে। প্রাথমিকভাবে ২০১২ সালে এই মেট্রোস্টেশন চালু হয়। তখন একটি প্ল্যাটফর্ম ছিল মাটি থেকে ৬০ মিটার নিচে। পরবর্তী সময়ে এখানে আরও নিচে প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়। ২০১৭ সালে যুক্ত হয় ১০ নম্বর লাইন। এই স্টেশনে চলাচলের জন্য ৯১টির বেশি এস্কেলেটর রয়েছে।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধরত দেশ ইউক্রেনের গণপরিবহন বিশ্বমানের। রাজধানী কিয়েভে বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন ও সুগভীর মেট্রোস্টেশন রয়েছে। এর একটি ইউনিভারসায়তেত। এটির অবস্থান ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮৭ মিটার বা ২৮৫ ফুট গভীরে। স্টেশনটি চালু হয় ১৯৬০ সালের ৬ নভেম্বর। পাশেই রয়েছে কিয়েভের ঐতিহাসিক তারাস শেভচেঙ্কো ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস। ২০২২ সালে রুশ বাহিনীর বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচতে এই স্টেশন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে এই মেট্রোস্টেশনের অবস্থান। ভূপৃষ্ঠ থেকে এটির অবস্থান ৮৬ মিটার বা ২৮২ ফুট নিচে। ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর স্টেশনটি চালু হয়। শুধু সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরই নয়, রাশিয়ার সবচেয়ে গভীর মেট্রোস্টেশন এটি। ১২৫ মিটারের দুটি এস্কেলেটর রয়েছে স্টেশনটিতে।
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর দোরোগোমিলোভা ডিস্ট্রিক্টে পার্ক পোবেদি মেট্রোস্টেশনের অবস্থান। স্টেশনটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮৪ মিটার বা ২৭৬ ফুট নিচে। ১৯৮৬ সালে আইকনিক এই স্টেশনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। কাজ শেষে স্টেশনটি চালু করা হয় ১৭ বছর পর, ২০০৩ সালে। ইউরোপের সবচেয়ে লম্বা ১২৬ মিটার এস্কেলেটর আছে পার্ক পোবেদি স্টেশনে।
যুক্তরাষ্ট্র তথা পুরো উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে গভীর মেট্রোস্টেশন ওয়াশিংটন পার্ক স্টেশন। বিশ্বের সবচেয়ে গভীর মেট্রোস্টেশনের তালিকায় এটি ৯ নম্বরে রয়েছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে এই স্টেশন ৭৯ মিটার বা ২৬০ ফুট গভীরে অবস্থিত। ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে এই স্টেশন চালু করা হয়। উচ্চগতির এলিভেটর, সুউচ্চ ভাস্কর্য এই স্টেশনের নকশায় বাড়তি সৌন্দর্য যোগ করেছে।
রাশিয়ার একটি মেট্রোস্টেশন এটি। অবস্থান দেশটির সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৭ মিটার বা ২২০ ফুট নিচে এই স্টেশনের অবস্থান। ১৯৫৮ সালের ১ জুন স্টেশনটি চালু হয়। ২০০৬ সালে এসে এই মেট্রোস্টেশনের আলোকসজ্জা আর আবহে বড় ধরনের হালনাগাদ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র: ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস