ভারতে বিরোধীদের প্রতিবাদে সংসদ মুলতবি
পেট্রপণ্যসহ অত্যাবশ্যক সব জিনিসের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি ও কৃষক আন্দোলন নিয়ে বিরোধীদের সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে সংসদের উভয় কক্ষ আগামী সোমবার পর্যন্ত মুলতবি করে দেওয়া হলো। বিরোধীদের প্রতিরোধের কারণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উদ্যাপন–সম্পর্কিত এক জরুরি বিবৃতি পাঠে ব্যর্থ হন। সংসদবিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি আজ বুধবার জানান, সদস্যরা সর্বসম্মত না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ওই বিবৃতি দেবেন না।
বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্বে চলতি সপ্তাহে কোনো কক্ষের কাজ স্বাভাবিকভাবে হতে পারল না। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভার ভোটের জন্য অধিবেশনের মেয়াদও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সংসদ মুলতবি হলেও আজ হরিয়ানা বিধানসভায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে আনা কংগ্রেসের অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাশিতভাবে খারিজ হয়েছে। ৯০ সদস্যবিশিষ্ট বিধানসভায় বিজেপি ও তার সহযোগী দল জেজেপির মিলিত সদস্যসংখ্যা ৫০। জেজেপি সদস্যরা কৃষি আইনের সমালোচনা ও আইন বাতিলের দাবি জানানো সত্ত্বেও সরকারের পক্ষে আস্থা জানিয়ে ভোট দেন। বিধানসভার মেয়াদ পৌনে চার বছর বাকি থাকায় তাঁরা ক্ষমতা হারানোর ঝুঁকি নিতে চাননি।
কংগ্রেস এই প্রস্তাব এনেছিল কৌশলগত কারণে। ক্ষমতাসীন সমর্থক দল জেজেপি যে সরকারের বিরুদ্ধাচরণ করবে না, কংগ্রেসের তা জানা ছিল। কিন্তু তবু তারা অনাস্থা প্রস্তাব আনে আন্দোলনরত কৃষকদের পাশে কোন কোন দল রয়েছে, তা স্পষ্ট করতে।
কংগ্রেস নেতা ও রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভূপিন্দর সিং হুডা বিতর্কে অংশ নিয়ে বলেন, রাজ্যের কৃষকেরা শাসক দলের বিধায়কদের সামাজিকভাবে বর্জন করেছেন। গ্রামে গ্রামে বিধায়কেরা ঢুকতে পারছেন না। মুখ্যমন্ত্রী জনসম্পর্ক কর্মসূচি বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁর হেলিকপ্টার নামতে দেওয়া হচ্ছে না। প্রজাতন্ত্র দিবসে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় পতাকাও তিনি তুলতে পারেননি। কৃষিপ্রধান হরিয়ানার মানুষ সরকারকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে। তবু তাঁরা ক্ষমতা আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার অবশ্য বলেন, কৃষি আইন কৃষকদের ভালোর জন্যই আনা। কংগ্রেস কৃষকদের ভুল বোঝাচ্ছে। আইন কিছুতেই বাতিল করা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার আইনে সংশোধন আনতে প্রস্তুত। কিন্তু সে জন্য কৃষকদের আলোচনায় বসতে হবে। কিন্তু কংগ্রেস তা হতে দিচ্ছে না।
পাঞ্জাব, উত্তরাখন্ড ও উত্তর প্রদেশ বিধানসভার ভোট আগামী বছর। কৃষক অসন্তোষের ঢেউ হরিয়ানার মতো এসব রাজ্যেও প্রবল। কিন্তু যেহেতু হরিয়ানার ভোটের এখনো অনেকে দেরি, সরকারের পতনের আশঙ্কা তাই কম। দলীয় অসন্তোষ সামাল দিতে বিজেপি উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রীকে বদল করতে বাধ্য হয়েছে। এসব রাজ্যের লোকসান পশ্চিমবঙ্গ থেকে পুষিয়ে নিতে বিজেপি মরিয়া।