বিএসএফের কাজের এলাকা বাড়াবেন না, বৈঠকে মোদিকে মমতা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন দিল্লি সফররত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাঁরা বৈঠকে বসেন। এ সময় মোদির কাছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাজের এলাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান মমতা।
আধা ঘণ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মমতা বলেন, বিএসএফের কাজকর্মে এমনিতেই নানা অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। এই বাহিনীর সদস্যরা সীমান্ত এলাকায় গুলি করে লোকজনদের মেরে ফেলছে। এখন কাজের এলাকা ও এখতিয়ার বাড়ানোর ফলে রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। নতুন এই নির্দেশনা প্রত্যাহার করা দরকার।
বিএসএফের কাজের এলাকা বাড়ানোর একতরফা নির্দেশনার ফলে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নড়বড়ে হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করে বৈঠকে মমতা প্রধানমন্ত্রী মোদিকে বলেন, এসব বন্ধ হওয়া দরকার। বিএসএফ রাজ্যের কাছে সাহায্য চাইলে রাজ্য সরকার তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। বিএসএফের সদস্যরা যোগ্যতার সঙ্গে সীমান্ত সামলাক। সেটাই তাদের কাজ।
সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব ও আসামসহ কয়েকটি রাজ্যে সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিএসএফের কাজের এখতিয়ার বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব এলাকায় বিএসএফ ধরপাকড় ও তল্লাশির কাজ চালাতে পারবে। পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাব এই নির্দেশনার বিরোধিতা করছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে বৈঠকে মমতা ত্রিপুরায় চলমান হিংসাত্মক ঘটনার জন্য ওই রাজ্যের বিজেপি সরকারকে দায়ী করেছেন। সাংবাদিকদের মমতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি ত্রিপুরায় অরাজকতা চলছে। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের আক্রমণ করা হচ্ছে। ধরপাকড় করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচার চালাতে দেওয়া হচ্ছে না। গণতন্ত্রে এটা কাম্য নয়।
এ সময় মমতা জানান, আগামী বছরের এপ্রিলে কলকাতায় বিশ্ব বাণিজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনের উদ্বোধন করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে অনুরোধ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি এই প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
দুই মাস আগে দিল্লি এসে মমতা প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এবারও তিনি মোদির সঙ্গে বৈঠক করলেন। যদিও মোদি ও মমতার এই সাক্ষাতকে কেন্দ্র করে বিরোধীরা সরব হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, এই সফরের সঙ্গে রাজ্যের উন্নয়নের কোনো সম্পর্ক নেই। যা আছে তা সম্পূর্ণভাবে মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক সম্পর্ক।
সমালোচনায় মুখর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কংগ্রেসের নেতৃত্বও। দলটির লোকসভার সদস্য অধীর চৌধুরী গতকাল সন্ধ্যায় মমতাকে কটাক্ষ করে বলেন, কংগ্রেসকে কীভাবে আরো দুর্বল করা যায়, ভাঙা যায় সেই বিষয়ে পরামর্শ চাইতে গেছেন। তিনি বলেন, বিএসএফ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এখন সরব হচ্ছেন। অথচ এটা নিয়ে বিধানসভায় আলোচনার সময় তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।
সিপিএম ও কংগ্রেস– দুই দলই বারবার অভিযোগ করে বলছে, মোদি ও মমতা একে অন্যকে সাহায্য করছেন। মমতার লক্ষ্য দুর্নীতির তদন্তের আওতা থেকে তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ রাখা। আর মোদির লক্ষ্য দেশে মমতার হাত ধরে বিজেপি বিরোধী ঐক্য গড়তে না দেওয়া।
সাংবাদিকেরা গতকাল মমতার কাছে জানতে চান, এবারের দিল্লি সফরে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তিনি দেখা করবেন কি না? জবাবে মমতা বলেন, দিল্লিতে এলেই সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে হবে এমন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই। কংগ্রেস এখন পাঞ্জাবের ভোট নিয়ে ব্যস্ত। সে সব মিটুক, তারপর দেখা যাবে।
গোয়াসহ বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসে ভাঙন ধরিয়ে মমতা নিজের দলের শক্তি বাড়াতে চাইছেন। এবারের দিল্লি সফরেও কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন বিহারের সাবেক সাংসদ ও ভারতীয় ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ। বিজেপিতে উপেক্ষিত হয়ে তিনি এর আগে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন।
হরিয়ানার কংগ্রেস নেতা অশোক তানওয়ার মঙ্গলবার দিল্লিতে মমতার সঙ্গে দেখে করেন। এ সময় তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূলে যোগদানের এই মিছিলে সামিল হয়েছেন সংযুক্ত জনতা দলের পবন ভার্মাও। এর আগে আসাম ও গোয়ায় কংগ্রেসের অনেক নেতাকে মমতা তৃণমূলে টেনেছেন। কংগ্রেসের অভিযোগ, মমতা এভাবে বিজেপি ও মোদিকে সাহায্য করছেন। বিরোধী ঐক্য নষ্ট করছেন। বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগাভাগি করছেন।