পদ্মকাঁটায় বিদ্ধ মমতার ঘুম নেই!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘুম কেড়ে নিয়েছে পদ্মফুল। এখন সেই পদ্মফুলের (বিজেপির প্রতীক) কাঁটায় বিদ্ধ হচ্ছেন তিনি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো ভাবেননি, গত বৃহস্পতিবার এভাবে তাঁকে বিদ্ধ করবে পদ্মকাঁটা। হয়তো ভেবেছিলেন, এত দিন ধরে গোটা পশ্চিমবঙ্গের বাগানে যেভাবে ঘাসফুল ফুটিয়েছেন, এবার সেই বাগানে আরও ফুটবে ঘাসফুল (তৃণমূলের প্রতীক)।
বিরোধীরা বলছেন, নির্বাচনে এমন ফলাফলের ঘোর কাটছে না মমতার। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, জোর করে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৪ শতাংশ আসনে জয়লাভ, ভোটের নামে রাজ্যব্যাপী দলীয় সন্ত্রাস, অসাম্প্রদায়িক চেতনার ওপর আঘাত—এসবকে মেনে নেননি তাঁরা। তাই তো এবার মমতাকে যোগ্য জবাব দিয়েছেন। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ের পথকে প্রশস্ত করছে এ নির্বাচনের ফল।
পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে লোকসভার ৪২টি আসন। আর রাজ্য বিধানসভায় রয়েছে ২৯৪টি আসন। প্রতিটি লোকসভায় রয়েছে সাতটি করে বিধানসভা আসন। আর সব মিলিয়ে এই ৪২টি লোকসভা আসনে রয়েছে বিধানসভার ২৯৪টি আসন। এবার লোকসভা নির্বাচনে এই ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে প্রদত্ত ভোট থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে, এর মধ্যে ১২৮টি আসনে এগিয়ে গেছে বিজেপি। অর্থাৎ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ের পথকে প্রশস্ত করেছে এই লোকসভার নির্বাচন। ২০১৬ সালের সবশেষ বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪ আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল মাত্র তিনটি আসনে। বামফ্রন্ট জিতেছিল ৩২টি আসনে আর কংগ্রেস জিতেছিল ৪৪টি আসনে। আর তৃণমূল পেয়েছিল ২১১টি আসন।
শুধু তা–ই নয়, কলকাতা পৌর করপোরেশনের রয়েছে ১৪৪টি ওয়ার্ড। লোকসভার ফলাফলের নিরিখে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে বলা হয়েছে, করপোরেশনের অন্তত ৫০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। ফলে, ভবিষ্যতে অনুষ্ঠেয় পৌর করপোরেশন নির্বাচনেও দাপট দেখাবে বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডেও এগিয়ে গেছে বিজেপি। আর এই করপোরেশনের বড়বাজার এলাকার সব ওয়ার্ডে গেরুয়াঝড় বয়ে গেছে।
গত জানুয়ারি মাসে কলকাতা পৌর করপোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিম যে ওয়ার্ড থেকে ১৪ হাজার ভোটে জিতেছিলেন, এবার লোকসভা নির্বাচনের পর দেখা গেছে, সেই ওয়ার্ডে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে বিজেপি।
লোকসভা আসনের ফল ঘোষণার পর গতকাল শুক্রবার রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রথম পা রাখেন কলকাতার রাজ্য বিজেপি কার্যালয়ে। এখানেই তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতার উদ্দেশে বলেছেন, ‘মাথা ঠান্ডা রাখুন। একবার ঘুরে আসুন হরিদ্বার।’ বলেন, ‘এই উনিশে তো তৃণমূল হলো হাফ, আর একুশে হবে সাফ।’