২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

জ্ঞানবাপি মামলা গেল জেলা আদালতে

ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসিতে জ্ঞানবাপী মসজিদ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতের বারানসির কাশী বিশ্বনাথ মন্দির–জ্ঞানবাপি মসজিদ মামলাটি দেওয়ানি আদালত থেকে জেলা আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ দিয়ে বলেন, জেলা আদালতের কোনো অভিজ্ঞ বিচারকের উচিত এই মামলা শোনা। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় সূর্যকান্ত ও পি এস নরসিংহের আদালত এই নির্দেশ দেন। আদালত বলেন, মসজিদের ভিডিও জরিপ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া অন্যায় হয়েছে। এটা একেবারে বন্ধ করতে হবে। বিচারক ছাড়া ভিডিও জরিপ আর কেউ দেখবেন না।

সুপ্রিম কোর্ট বলেন, বিষয়টি জটিল এবং স্পর্শকাতর। তাঁরা সব দিক বিচার করে সব পক্ষের পছন্দসই একটা সিদ্ধান্তে আসতে চাইছেন। সে জন্যই তাঁরা চান, অভিজ্ঞ কোনো বিচারপতি এই মামলা শুনুন। জেলা আদালতে মামলার নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী সব নির্দেশ জারি থাকবে। মামলার রায় বেরোনোর পরবর্তী আট সপ্তাহ পর্যন্তও তা বহাল থাকবে, ওই সময়ের মধ্যে যেকোনো পক্ষ যাতে উচ্চতর আদালতে যেতে পারেন।

মসজিদ কর্তৃপক্ষের আইনজীবী হুজেফা আহমদির আবেদনে সাড়া দিয়ে শুক্রবার তিন বিচারপতির বেঞ্চ বলেন, সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে মসজিদে অজু করার ব্যবস্থা জেলা শাসককে করতে হবে। অন্তর্বর্তী রায়ে অজু করার জায়গায় তথাকথিত ‘শিবলিঙ্গ’ রক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে ওই ‘পুকুরে’ অজুর ব্যবস্থাই রাখা হয়নি। গোটা এলাকাটাই জেলা কর্তৃপক্ষ ঘিরে রেখেছিল। মসজিদ কর্তৃপক্ষ নামাজিদের বাড়ি থেকে অজু করে আসার নির্দেশ দিয়েছিল। অজুসংক্রান্ত এই নির্দেশের সময় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, সেটা হবে অজুর বিকল্প ব্যবস্থা। হুজেফা আহমদির আপত্তি মেনে বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, তিনি অজুর ব্যবস্থা করতে বলেছেন। বিকল্প ব্যবস্থা করতে বলেননি।

আইনজীবী হুজেফা আহমদি শুক্রবারের শুনানির সময় বারবার ১৯৯১ সালের ‘প্লেসেস অব ওয়রশিপ’ আইনের উল্লেখ করেন। বলেন, এই ধরনের বিবাদ যাতে না বাধে, সে জন্যই মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট ওই আইন প্রণয়ন করেছিলেন। অতএব সিভিল কোর্টের নির্দেশ খারিজ করাই উচিত। এই যুক্তির জবাবে বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ১৯৯১ সালের আইনে উপাসনালয়ের চরিত্র বদল করা যাবে না বলা হয়েছিল। কিন্তু উপাসনালয়ের চরিত্র নির্ধারণ করা যাবে না, তেমন কিছু বলা হয়নি। এ ছাড়া ওই আইন নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনই আলোচনার মধ্যে তাঁরা যেতে চান না।

শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট বলেন, তাঁরা তিনটি বিষয় বিবেচনা করতে পারেন। বলতে পারেন, নিম্ন আদালত মসজিদ কমিটির আবেদনের নিষ্পত্তি করুক। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের দেওয়া অন্তর্বর্তী সব নির্দেশ জারি রাখার কথা বলতে পারেন। তৃতীয়ত, মামলাটি তাঁরা জেলা জজের এজলাসে পাঠাতে পারেন। সুপ্রিম কোর্ট সেটাই করলেন। সিভিল জজের এজলাস থেকে সরিয়ে অভিজ্ঞ জেলা জজের এজলাসে পাঠালেন। জ্ঞানবাপি মসজিদে নামাজের অধিকার আগের রায়েই বহাল রাখা হয়েছিল। শুক্রবার অজুর ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেওয়া হলো জেলা শাসককে।

ভারতীয় হিন্দুদের প্রধান তিনটি উপাসনাস্থল বিতর্কিত। অযোধ্যায় রামের জন্মভূমি, কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির ও মথুরার শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি। বিতর্কের কারণ, তিন উপাসনাস্থলে তিনটি মসজিদের অবস্থান। কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, তিনটি উপাসনাস্থলের চরিত্র বদল করে প্রাচীনকালে মুসলমান শাসকেরা সেখানে মসজিদ তৈরি করেছিলেন। অযোধ্যায় রামের জন্মস্থলে বাবরি মসজিদ, কাশীতে বিশ্বনাথ মন্দির ভেঙে জ্ঞানবাপি মসজিদ এবং মথুরায় শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানে শাহি ঈদগাহ মসজিদ।

আশির দশকের শেষে বিজেপির সঙ্গে হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠন অযোধ্যার ‘মুক্তি আন্দোলন’ শুরুর সময় থেকেই বলে এসেছে, এই তিন উপাসনাস্থলকে ‘মসজিদমুক্ত’ করা তাদের মূল লক্ষ্য। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের আগে তাই স্লোগান উঠেছিল, ‘আভি সির্ফ অযোধ্যা হ্যায়, কাশী–মথুরা বাকি হ্যায়।’ অর্থাৎ এখন অযোধ্যা মুক্ত হচ্ছে। পরে মুক্ত হবে কাশী ও মথুরা।
আরও পড়ুন:

আরও পড়ুন