চীনকে হাম্বানটোটা বন্দর দেওয়া ঠিক হয়নি: রাজাপক্ষে
শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা নৌবন্দর চীনকে ইজারা দেওয়া ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন দ্বীপদেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। ভারতশক্তি ডট ইন ও স্ট্র্যাটেজিক নিউজ ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে ভারতকেই বেছে নিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে।
মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সরকার হাম্বানটোটা বন্দর ৯৯ বছরের জন্য ইজারা দিয়েছিল। গোতাবায়া বলেছেন, এখন এই চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করতে হবে। বিনিয়োগের জন্য ক্ষুদ্র অঙ্কের ঋণের বদলে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পোতাশ্রয় দিয়ে দেওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত ছিল।
ঋণের শর্ত অনুযায়ী, ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা বন্দরের ইজারা নেয় চীন। মাহিন্দা রাজাপক্ষের আমল থেকেই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ভালো হতে শুরু করে। পাশাপাশি আফ্রিকার জিবুতিতে সেনা ঘাঁটি তৈরি করে চীন ভারত মহাসাগরে সামরিক উপস্থিতি বাড়ায়।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ভারত মহাসাগরের গুরুত্ব বোঝেন। তিনি এও জানেন, বর্তমান ভূরাজনীতিতে এই মহাসাগরের গুরুত্ব কতটা। সেখানে শ্রীলঙ্কার অবস্থান ভূকৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। পশ্চিম থেকে পূর্বগামী সব গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ শ্রীলঙ্কার ধার ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে। সেটাই শ্রীলঙ্কাকে এতটা গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সে কারণে এই পথগুলোকে মুক্ত রাখা দরকার। সেখানে কারও নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত নয়।’
চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত গোতাবায়া রাজাপক্ষে বলেছেন, তিনি শ্রীলঙ্কাকে নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে দেখতে চান এবং সে লক্ষ্যে সবার সঙ্গেই কাজ করতে চান। তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কা ভারতের বন্ধু দেশ হিসেবে কাজ করবে। আর ভারতের স্বার্থের হানি হয়, এমন কিছুও করবে না শ্রীলঙ্কা।’ নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে যাচ্ছেন গোতাবায়া রাজাপক্ষে।
বড়ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষের আমলে (২০০৫-২০১৫) শ্রীলঙ্কার সঙ্গে চীনের সখ্য ‘পুরোপুরি বাণিজ্যিক’ ছিল বলে আখ্যা দেন গোতাবায়া। নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমি ভারত, সিঙ্গাপুর, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। শুধু চীনই আমার দেশে বিনিয়োগ করবে না।’ পাশাপাশি তিনি শ্রীলঙ্কায় বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে জোর দেন।
সাক্ষাৎকারে কিছু খোলামেলা কথা বলেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া । বিশেষ করে ভারত ও চীনের মতো দুই পরাশক্তির বিবাদের মধ্যে ছোট দেশ হিসেবে শ্রীলঙ্কা কী ভূমিকা রাখতে পারে, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা পরাশক্তির ক্ষমতার লড়াইয়ের মাঝখানে ঢুকতে চাই না। শ্রীলঙ্কা খুব ছোট দেশ। ফলে তাদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা আমাদের কাজ নয়।’ এ জন্য ভারত ও চীন দুই দেশের সঙ্গেই কাজ করতে চান তিনি। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গেই কাজ করতে চাই। আর তাই এমন কিছু করতে চাই না, যাতে কারও ক্ষতি হয়। ভারতের উদ্বেগের কারণ আমরা বুঝি। সে জন্য ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, এমন কিছু আমরা করতে পারি না।’