কর্ণাটকে হিজাব বিতর্ক
ভারতের বিজেপিশাসিত কর্ণাটকে হিজাব বিতর্ক ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে ও জটিল হচ্ছে। মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিজাব পরে কলেজে আসতে নিষেধাজ্ঞা জারির পর কোনো কোনো কলেজে হিন্দু শিক্ষার্থীদের গেরুয়া ওড়না বা ‘স্কার্ফ’ পরে কলেজে আসতে দেখা যায়। ছাত্রদেরও গেরুয়া চাদর পরে কলেজে আসতে দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে কোথাও কোথাও উত্তেজনাও দেখা দিয়েছে। যদিও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর এক টুইট হিজাব বিতর্কে নতুন রাজনৈতিক মাত্রা যোগ করেছে।
আজ শনিবার দেশজুড়ে ছিল সরস্বতী পূজা। এ দিন রাহুল টুইট করে বলেন, ‘শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে হিজাবকে টেনে এনে আমরা ভারতের মেয়েদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নিচ্ছি। মা সরস্বতী বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী। তিনি পক্ষপাতিত্ব বা বৈষম্য করেন না।’
কর্ণাটকের কলেজ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব পোশাকসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজস্ব নিয়ম বা রীতি তৈরির অধিকার রয়েছে। সেই অনুযায়ী উদুপি জেলার এক কলেজ কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি জানায়, মুসলিম পড়ুয়ারা হিজাব পরে আসতে পারবেন না। বলা হয়, মেয়েরা ‘স্কার্ফ’ পরতে পারেন, তবে তা ওড়নার রঙের সঙ্গে মানানসই হতে হবে। এই বিতর্ক ক্রমে অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়ছে। হিজাব নিয়মের প্রতিবাদে উদুপির এক মুসলমান ছাত্রী কর্ণাটক হাইকোর্টে মামলা করেছেন। তাঁর আবেদন, ধর্মাচরণ সাংবিধানিক অধিকার। হিজাব পরা ধর্মাচরণের অঙ্গ। তা মৌলিক অধিকার বলে গণ্য হোক।
হিজাব বিতর্ক মেটাতে কর্ণাটক সরকার ইতিমধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ মুসলমান ছাত্রীদের বলেছে, কমিটির প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত তাঁরা যেন হিজাব পরে কলেজে না আসেন। তাঁদের বলা হয়েছে অনলাইন ক্লাস করতে।
মুসলমান মেয়েদের এই আন্দোলনে ছেলেদেরও যোগ দিতে দেখা যাচ্ছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে হিন্দুদের দিক থেকেও। গেরুয়া চাদর গায়ে হিন্দু ছাত্রছাত্রীদের মিছিল করে কলেজে যেতে দেখা যাচ্ছে। স্লোগান উঠছে ‘জয় শ্রীরাম’। এখন মনে করা হচ্ছে, হাইকোর্টের রায় আসা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়মনীতিতে বহাল থাকবে।
হিজাব বিতর্ক নিয়ে রাহুল গান্ধীর টুইট বিজেপিশাসিত কর্ণাটকের রাজনীতিকে চনমনে করে তুলেছে। কর্ণাটক বিজেপির পক্ষ থেকে পাল্টা টুইট করে বলা হয়, ‘রাহুল শিক্ষাকে সাম্প্রদায়িক করে তুলতে চাইছেন। তিনি আরও একবার প্রমাণ করলেন ভবিষ্যৎ ভারতের জন্য কতটা ভয়ংকর। লেখাপড়ার জন্য হিজাব অপরিহার্য হলে কংগ্রেসশাসিত রাজ্যে তিনি কেন তা বাধ্যতামূলক করছেন না?’
সম্প্রতি কর্ণাটকের উপনির্বাচনে শাসক বিজেপির ফল আশানুরূপ হয়নি। বিভিন্ন কারণে সরকারের জনপ্রিয়তাও নিম্নগামী। আগামী বছরের মে মাসে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন। কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি অন্যান্য রাজ্যের মতো কর্ণাটকে ধর্মীয় মেরুকরণ সৃষ্টিতে মরিয়া। হিজাব বিতর্ক সেই উদ্দেশ্যেই।