আসামে 'বাংলাদেশি হিন্দু'বিরোধী আন্দোলন
ভারতের আসাম রাজ্যে ‘বাংলাদেশি হিন্দু’বিরোধী আন্দোলন করছে কয়েকটি সংগঠন। তাদের দাবি, নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশি হিন্দুদের’ নাগরিকত্ব দেওয়া চলবে না। এ দাবিতে গতকাল শুক্রবার রাতে মশাল হাতে মিছিলে অংশ নেন অসমিয়ারা।
ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, শিখ ও জৈনদের নাগরিকত্ব দিতে চায়। এ জন্য সংবিধান সংশোধনী বিল এনেছে জাতীয় সংসদে।
এই বিলের প্রতিবাদে আসামে আন্দোলনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। গণ–আন্দোলনের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধির আশঙ্কাও।
গতকাল রাতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বাতিলের দাবিতে মিছিল বের করে আসু (সারা আসাম ছাত্র সংস্থা)। সংগঠনটি আটের দশক থেকেই তীব্র বাঙালিবিদ্বেষী বলে পরিচিত।
একই দাবিতে গতকাল সকালে রাজধানী গুয়াহাটিতে মিছিল বের করে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি (কেএমএসএস) ও সারা আসাম সংখ্যালঘু ছাত্র সংস্থা (আমসু)।
এর পাশাপাশি আসামে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন সংযুক্ত মুক্তি বাহিনী ও আসামের স্বাধীন গোষ্ঠীতেও (উলফা-আই) যোগদানের বহর বেড়ে গিয়েছে।
উলফায় নতুন করে যোগদানের কারণ হিসেবে সংগঠনের নেতা অনুপ চেটিয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকেই দায়ী করেন।
মুঠোফোনে প্রথম আলোকে অনুপ চেটিয়া বলেন, আসাম বা ভারত সরকারের ওপর অসমিয়াদের আর আস্থা নেই। বাংলাদেশিদের হাত থেকে রাজ্যকে বাঁচাতে তাই অস্ত্র তুলে নেওয়ার ঝোঁক বাড়ছে।
পুলিশ কর্তারাও সেটা মেনে নিচ্ছেন। রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক পল্লব ভট্টাচার্যও সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলই তরুণ প্রজন্মকে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে প্রলুব্ধ করছে।
রাজনৈতিক দলগুলো কোনো কোনোটি বিজেপির ‘বাংলাদেশি’প্রীতির বিরোধী। বিজেপির জোটসঙ্গী অসম গণপরিষদ শরিকি বিবাদে পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপিকে হারাতে আলাদাভাবে লড়ছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করছে হিন্দু বাঙালিদেরও একটা বড় অংশ। জাতপাতের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার নামে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ভাঁওতাবাজির’ অভিযোগ রয়েছে তাদের।
তবে বাঙালিদের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
আসাম রাজ্য নাগরিক অধিকার রক্ষা সমন্বয় সমিতির সভাপতি তপোধীর ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাঙালি বাঙালিই। হিন্দু বা মুসলিম বলে কিছু হয়, এটা আমি বিশ্বাসই করি না।’
একই মত সারা আসাম বাঙালি ছাত্র যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপক দেরও। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বাঙালির ঐক্য ধ্বংস করতেই এসব করা হচ্ছে। সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।