শহরে ভোটের ফল খারাপ কেন, ক্ষুব্ধ মমতার প্রশ্ন
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সম্প্রতি শেষ হওয়া লোকসভার ভোটে শহরাঞ্চলে ভালো ফল করেনি রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস। দলের প্রধান ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে তাঁর তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন পৌর এলাকায় থাকা দলটির নেতাদের ওপর।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্নের সভাঘরে রাজ্যের বিভিন্ন পৌরসভা, কলকাতা করপোরেশনের কাউন্সিলরসহ কর্মকর্তাদের নিয়ে এ বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই মমতা ভর্ৎসনা করেছেন পৌর প্রতিনিধিদের।
মুখ্যমন্ত্রী হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘এবার পৌর এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে। যারা এলাকায় কোনো কাজই করেনি, ফাঁকি দিয়েছে, অর্থ কামাই করেছে, চাঁদাবাজি করেছে, তাদের আর মনোনয়ন দেওয়া হবে না। দল তাদের বিদায় দেবে।’
লোকসভার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তৃণমূল কার্যত পিছিয়ে পড়েছে কলকাতা সিটি করপোরেশনসহ রাজ্যের বেশির ভাগ পৌরসভায়। শুধু তা-ই নয়, তৃণমূল এই রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৯০টিতে পিছিয়ে রয়েছে। সেখানে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি।
এমনটা ভাবেনি তৃণমূল নেতৃত্ব। তাদের ভাবনা ছিল, লক্ষ্মীর ভান্ডারসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে ভোটের বাজারে এগিয়েই থাকবে তারা। তবে ভোটের বাক্সে গ্রামাঞ্চলে লক্ষ্মীর ভান্ডারের একটা প্রভাব পড়লেও রাজ্যের অধিকাংশ পৌরসভার তার তেমন প্রভাব পড়েনি। এমনকি কলকাতা পৌর করপোরেশনের মতো এলাকায় যেখানে একচ্ছত্র ছিল তৃণমূল কংগ্রেস, সেখানেও ভাগ বসিয়েছে বিজেপি। কলকাতার বিভিন্ন তৃণমূল নেতার এলাকায় পরাস্ত হয়েছে শাসক দল তৃণমূল। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর এলাকায় পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। আর এই ছবি ভেসে ওঠার পর চরম অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল নেত্রী মমতা।
রাজ্যের ১২১টি পৌরসভার মধ্যে ৬৭টিতে এগিয়ে বিজেপি। তৃণমূল এগিয়ে ৫০টি পৌরসভায়। বাকিগুলোয় অন্য সব দলের।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকালের সভায় পৌর প্রতিনিধিদের কাজে ফাঁকি, চাঁদাবাজি, অনুমতি ছাড়া বিভিন্ন পৌরসভায় করবৃদ্ধি, বিভিন্ন পরিষেবার নামে টাকা আদায়, সরকারি জমি দখল, বিক্রি, বেহাত করা, বিভিন্ন ফাঁকা জমি দখলসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজে ফাঁকি দেওয়ার নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পৌর নেতৃত্বের এ অবস্থার জন্যই এবার পৌর এলাকায় তৃণমূলের পরাজয় ঘটেছে। এভাবে কাজ করলে সামনে আর টিকিট মিলবে না। শাস্তি মিলবে।
মমতা এ কথাও বলেন, ‘আমি টাকা তোলার মাস্টার চাইছি না, চাইছি জনগণের সেবক। আজ আমার বলার দিন, আপনাদের শোনার দিন। পৌরসভা যদি এভাবে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা না বুঝে কাজ করতে থাকে, তবে পৌরসভা বা পঞ্চায়েত রাখার দরকার কী?’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বহু জমি দখল হচ্ছে, পুলিশ ও প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। টাকার বিনিময়ে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কেউ কেউ অনৈতিক ও অবৈধভাবে জমি ভরাটের কাজ করছে। খালি জায়গা দেখলেই লোক বসাচ্ছে। বাংলার ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এটা চলতে পারে না। টাকা খেয়ে বা খাইয়ে এসব কাজ করছে কেউ কেউ। পুলিশ দু-একজনকে অ্যারেস্ট করুক না?’