এবার ঝাড়খন্ডে সরকার ফেলার চেষ্টায় বিজেপি
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে গত জুন মাসের শেষ দিকে সরকার পতন হয়। সরকার গঠন করে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। এরপর বিহার ও দিল্লিতেও সরকার পতনের চেষ্টা করেছিল দলটি। দিল্লিতে তারা এখনো সফল হয়নি, কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে বিহারে বিজেপির ‘অপচেষ্টা’ আপাতত ব্যর্থ বলেই মনে হচ্ছে।
গত কয়েক দিনে নতুন করে সরকার ফেলার চেষ্টা শুরু হয়েছে পূর্ব ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যে। নির্বাচন কমিশন রাজ্যপাল রমেশ বেসকে চিঠি পাঠিয়ে বলেছে, মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা দলের প্রধান হেমন্ত সরেন বিধায়ক হিসেবে ‘অযোগ্য’। তাঁর নির্বাচন ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপাল এখনো চুপ। তবে দিন কয়েকের মধ্যেই তিনি কেন্দ্রীয় সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে তাঁর মতামত জানাতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সে ক্ষেত্রে বিজেপিবিরোধী হিসেবে পরিচিত ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার সরকারের পতন হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। এমন এক অবস্থায় শঙ্কিত মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন দলীয় বিধায়কদের গতকাল শনিবার তিনটি তাপানুকূল বাসে করে দক্ষিণ ঝাড়খন্ডের পাহাড় আর নদী পরিবেষ্টিত জেলা খুন্তিতে নিয়ে গেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ছবিতেও দেখা যাচ্ছে, লাইফ জ্যাকেট পরে এসব বিধায়ক একটি যন্ত্রচালিত নৌকায় করে নদী ভ্রমণ করছেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন ও তাঁর দলের বিধায়কেরা এখন রাজ্যের রাজধানী রাঁচিতে নেই। তাঁরা সবাই এখন খুন্তিতে অবস্থান করছেন। মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন সেখান থেকেই রাজ্যের আমলা ও সচিবদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন।
ঝাড়খন্ডে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে ২০১৯ সালে। সেই নির্বাচনে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা ৩০ এবং বিজেপি ২৫ আসনে জয়ী হয়। বিধানসভায় আসন মোট ৮১টি। সেবার ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চাকে হারানোর পর্যায়ে পৌঁছে যায় বিজেপি। এরপর আরও তিন বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিলে দলটির বিধায়ক বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ জনে।
তবে কংগ্রেস ও বিহারের লালু প্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল মিলিয়ে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের সঙ্গে এখনো প্রায় ৫০ জন বিধায়ক আছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনের আশঙ্কা, যেকোনো সময় তাঁদের একাংশকে দলে ভেড়াতে পারে বিজেপি। বিশেষত তিনি যদি মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে সরে যান।
মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এমন একজন সরকারি কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঝাড়খন্ড ছোট রাজ্য এবং এখানে বিধায়ক কিনতে খুব বেশি অর্থ বিজেপির মতো দলকে খরচ করতে হবে না। এটা মনে রাখতে হবে, কেন্দ্রীয় স্তরে বিজেপির হাতে প্রচুর অর্থ রয়েছে, ফলে উদ্বেগের কারণও রয়েছে।’
ঝাড়খন্ডে সরকার পতনের লক্ষ্যে গত এক মাসে রাজ্যের একাধিক বিধায়ককে অর্থের বিনিময়ে দলে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করে বিজেপি। এর মধ্যে একটা পর্যায়ে টাকা দেওয়া হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গেও, যা নিয়ে সরব হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূলের সঙ্গে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার সম্পর্ক ভালো।
সরকারে ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার শরিক দল কংগ্রেসের নেতা আলমগীর আলম গতকাল শনিবার বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে দু-এক দিনের মধ্যে খুন্তি থেকে রাঁচিতে ফিরবেন তাঁরা। ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে রোববার থেকে কংগ্রেসও মাঠে নামবে বলে জানান তিনি।
ঝাড়খন্ডের সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মুখ্যমন্ত্রীর পদ হারালে হেমন্ত সরেনকে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন জিতে নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনী ত্রুটির জন্য তাঁর বিধায়ক পদ চলে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিনি মন্ত্রিত্ব হারাবেন। তবে সরকার টেকাতে দলের নেতৃত্ব তুলে দিতে পারেন স্ত্রীর হাতে। এ ক্ষেত্রে তাঁর স্ত্রীকেও অবশ্য ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনে জিততে হবে। শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি বোঝা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।