মুসলমানদের মনের কথা নতুন করে বুঝতে চান মমতা
কয়েক দিন ধরেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মমতাবিরোধী আন্দোলন জোরালো হয়ে উঠেছে। মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদীঘিতে প্রায় ২৩ হাজার ভোটে বামফ্রন্ট-কংগ্রেসের জোটের কাছে তৃণমূল কংগ্রেসের পরাজয়ের পরে পশ্চিমবঙ্গে মমতাবিরোধী আন্দোলনে জোয়ার লক্ষ করা যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবারও রাজ্যে নানান স্তরে সভা, মিছিল, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন বিরোধীরা।
সাগরদীঘির হারের বিষয়টিকে একটি বিরাট ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এর প্রধান কারণ কংগ্রেস এমন এক আসনে জয় পেয়েছে, যেখানে জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ মুসলমান। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসসহ যেকোনো দলই ক্ষমতায় থাকে প্রধানত বাঙালি মুসলমানের ভোট পেয়ে, এই সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই তৃণমূলের পরাজয়ের পরে, স্বাভাবিকভাবেই আলোচনা শুরু হয়েছে বিষয়টি নিয়ে। গণসমাবেশে সিপিআইএম-কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, মুসলমান ভোট তৃণমূলের থেকে সরে যাচ্ছে।
এই বক্তব্যের কিছু ভিত্তি হয়তো আছে। তা সত্ত্বেও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, সাগরদীঘি আসনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন ‘উচ্চবর্ণের হিন্দু’ দেবাশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন দাঁড় করালেন? তাঁর বিরুদ্ধে দুটি বক্তব্য সাগরদীঘির ভোটারদের ছিল। এক. তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামার বাড়ির দিকের আত্মীয়। আর দ্বিতীয় অভিযোগটি আরও জোরালো। তিনি এত দিন বিজেপি করতেন। তা সত্ত্বেও, যে আসনে ভোটারদের বড় অংশটি মুসলমান, সেখানে একজন বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন দাঁড় করালেন মমতা, এটা নিয়ে বিস্তর কথা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে।
এ আলোচনার দুটি দিক আছে। বলা হচ্ছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নানা কারণে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান সমাজ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যথেষ্ট রেগে রয়েছেন। তাই তাঁরা এক হয়ে মমতার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন।
আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ যুক্তি দিচ্ছে, আসনটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হারতেই চেয়েছিলেন। এর কারণ, এই জয়ের ফলে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে কিছুটা উজ্জীবিত হলে, তাতে লাভ হয় তৃণমূল কংগ্রেসেরই। কারণ, বিজেপির ভোট কমে। যেমনটা হয়েছে সাগরদীঘিতে।
২০২১ সালের নির্বাচনে সেখানে বিজেপি ভোট পেয়েছিল ২৪ শতাংশ, ২ মার্চ পেয়েছে ১৪ শতাংশ। অর্থাৎ বিজেপির ভোট কমেছে ১০ শতাংশ এবং বাম-কংগ্রেস জোটের ভোট ১৯ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৭ শতাংশ।
অর্থাৎ, বিজেপির ভোট কমে গেছে এবং বাম-কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে, এটা তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য খুব ভালো লক্ষণ। কারণ, ২০২১ সালের নির্বাচনে ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃণমূলের ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছিল বিজেপি। বাম-কংগ্রেস জোটের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে তারা আবার ২০ শতাংশের নিচে চলে গেছে।
কিন্তু এই সমীকরণ ততক্ষণই ভালো, যতক্ষণ তৃণমূল কংগ্রেস ১ নম্বরে থাকছে। এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। আর সেই কারণেই একটি চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুসলমানদের মনের কথা নতুন করে বুঝতে চান তিনি। কমিটি আগামী সপ্তাহের শেষে তাঁদের বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেবেন। সেই বক্তব্যের ভিত্তিতে তৃণমূলের সংখ্যালঘু নীতির পরিবর্তন হয় কি না এবং হলে তার কী প্রভাব সংখ্যাগুরুর
ওপরে পড়ে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নজর থাকবে সেই দিকেই।