উত্তরাখন্ডে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় উচ্ছেদের আদেশ স্থগিত

উত্তরাখন্ডের হলদোয়ানিতে বিক্ষোভ
ছবি: এএনআই

উত্তরাখন্ডের হলদোয়ানিতে ভারতীয় রেলের জমিতে বসবাসকারী মানুষদের এখনই উচ্ছেদ করা যাবে না। এ বিষয়ে উত্তরাখন্ড হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট আজ বৃহস্পতিবার তা স্থগিত রাখলেন। বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কল ও বিচারপতি অভয় ওকা শুনানি শেষে জানান, পঞ্চাশ হাজার মানুষকে এভাবে উচ্ছেদ করা যায় না।

সুপ্রিম কোর্ট জানান, এটা একটা মানবিক বিষয়। উচ্ছেদের আগে ওখানে বসবাসকারীদের পুনর্বাসন সরকারকে করতে হবে। তা না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত থাকবে। বিচারপতিরা জানান, ওই জমিতে নতুন করে কিছু স্থাপন করা যাবে না। বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কল বলেন, এই মামলার অনেকগুলো দিক রয়েছে। বহু বছর ধরে হাজার হাজার মানুষ ওই জমিতে বসবাস করছেন। কেউ কেউ তা নিলামে কিনেছেন বলে দাবি করছেন, কেউ কেউ ইজারা (লিজ) নিয়েছেন। সে সব কাগজ তাঁদের রয়েছে। বিষয়টি মানবিক। কোনোভাবেই বলা যায় না, সাত দিনের মধ্যে জায়গা খালি করে দিতে হবে।

এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ৭ ফেব্রুয়ারি। তার মধ্যে সরকার ও রেল মন্ত্রণালয়কে সমাধান সূত্র বের করার কথা বলা হয়েছে। বিচারপতি ওকা শুনানির সময় বলেন, দুর্গতদের কথা না শুনেই হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন।  

উত্তরাখন্ড হাইকোর্ট গত ২০ ডিসেম্বর উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, আগামী ৯ জানুয়ারির মধ্যে রেলের ২৯ একর জমি খালি করে দিতে হবে। ১০ জানুয়ারি থেকে নির্দেশ পালনে তৎপর হচ্ছিল রাজ্য সরকার ও জেলা প্রশাসন। এর বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়েছিল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, এআইএমআইএম।

সরব হয়েছিল নাগরিক সমাজ ও নানা সমাজসেবী সংগঠন। প্রতিদিন চলছিল সর্বধর্ম প্রার্থনা ও মোমবাতি মিছিল।

স্বাধীনতার পর থেকে ওই জমিতে ধীরে ধীরে বসতি গড়ে ওঠে। এত বছর পৌরসভা বা প্রশাসন কেউ বাধা দেয়নি। ৪ হাজার ৩০০ পরিবার সেখানে পাকা ঘরবাড়ি তৈরি করেছে। বাস করেন ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ, যাঁদের অধিকাংশ মুসলমান। তাঁদের অভিযোগ, উপর্যপরি দ্বিতীয়বার রাজ্যে ক্ষমতা দখলের পর বিজেপি মুসলমানদের ‘শিক্ষা’ দিতে উঠেপড়ে লেগেছে।

রেলের ওই জমিতে রয়েছে ৪টি সরকারি বিদ্যালয়, একটি উচ্চবিদ্যালয়, একটি সরকারি মহিলা ইন্টার কলেজ, ১১টি বেসরকারি বিদ্যালয়, একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক, পৌরসভার তৈরি দুটি বিশাল পানির ট্যাংক, ৪টি মন্দির ও ১০টি মসজিদ। আর আছে অগণিত দোকান।

আরও পড়ুন

পূর্ব রেলের সাবেক মুখ্য জনসংযোগ অধিকর্তা সমীর গোস্বামী বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেল বা সরকারি জমিতে অবৈধভাবে বসবাস ও জবরদখল সর্বভারতীয় সমস্যা। সারা দেশে রেলের কত জমি এভাবে বেদখল হয়ে রয়েছে, তার প্রকৃত হিসাবই নেই। এই সমস্যা মানবিক। তার সুরাহা অবশ্যই সরকারকে করতে হবে। পুনর্বাসনের বিষয় নিশ্চিত না করে উচ্ছেদ উচিত নয়। সম্ভবও নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে রায় দেওয়ার আগে আদালতের অনেক কিছু ভেবে দেখা উচিত।

কারণ, এর সঙ্গে আইন শৃঙ্খলার প্রশ্নটি জড়িয়ে আছে।’