২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বাজেট ভাষণে বিজেপির কড়া সমালোচনা রাহুলের

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীফাইল ছবি: রয়টার্স

ভারতের লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী আজ সোমবার বাজেট ভাষণে বলেছেন, দেশে এক চক্রব্যূহ তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে পিষে মরছে দেশবাসী। তিন শক্তি মিলে সেই চক্রব্যূহ রচিত। একচেটিয়া পুঁজিপতি, যেখানে রয়েছেন হাতে গোনা কিছু মানুষ, যাঁরা দেশের সিংহভাগ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করছেন। রয়েছে ইডি, সিবিআই, আয়করের মতো দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিষ্ঠান। আর তৃতীয় শক্তি হলো দেশের রাজনীতির নেতৃত্ব।

রাহুল গান্ধী বলেন, এবারের বাজেট সেই চক্রব্যূহর ফাঁস থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করবে ভাবা হয়েছিল। কৃষক, যুব সম্প্রদায়, শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্বস্তির শ্বাস নিতে পারবে বলে মনে করা হয়েছিল। অথচ দেখা গেল, বাজেটে চক্রব্যূহর ফাঁস আরও মজবুত হয়েছে। একচেটিয়া কারবারিদের হাত আরও শক্ত হয়েছে। শিল্পপতি, রাজনীতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক একচেটিয়া আরও শক্তিশালী হয়েছে।

রাহুল বলেন, হাজার হাজার বছর আগে মহাভারতের যুদ্ধের সময় চক্রব্যূহর গঠন ছিল অনেকটা পদ্মফুলের মতো। এ কারণে তাকে পদ্মব্যূহ হও বলা হয়। একবিংশ শতকের চক্রব্যূহর আকারও পদ্মফুলের মতো, যার প্রতীক প্রধানমন্ত্রী জামার বুকে এঁটে দেন। চক্রব্যূহে অভিমন্যুর সঙ্গে যা করা হয়েছিল, যেভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল, এখনো তেমনই হচ্ছে।

এর আগেও রাহুল যা করেছেন, যেভাবে দুই শিল্পগোষ্ঠী একচেটিয়া পুঁজিপতি হিসেবে আম্বানি ও আদানির নাম করেছেন, আজও তিনি তা করেন। তিনি বলেন, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় চক্রব্যূহ রচনা করেছিলেন দ্রোণাচার্য, কর্ণ, কৃপাচার্য, কৃতবর্মা, অশ্বত্থামা ও শকুনি। এখনো ছয় ব্যক্তি মিলে একবিংশ শতাব্দীর চক্রব্যূহ তৈরি করেছেন। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, মোহন ভাগবত, অজিত দোভাল, আম্বানি ও আদানি। যথারীতি সরকারপক্ষ ওই মন্তব্যের প্রতিবাদ করে। আপত্তি জানান স্পিকার ওম বিড়লাও। রাহুল সঙ্গে সঙ্গে বলেন, আপত্তি থাকলে তিনি অজিত দোভাল, আম্বানি ও আদানির নাম নেবেন না।

তবে পরক্ষণেই রাহুল বলেন, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, গরিব, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জন্য এই বাজেট তৈরি হয়নি। হয়েছে ‘এ ওয়ান ও এ টুয়ের’ (আম্বানি ও আদানির নাম উচ্চারণ না করে) জন্য। চক্রব্যূহের ফাঁদে আটকে মারা হচ্ছে কৃষক, শ্রমিক, যুবসমাজ, মহিলা, আদিবাসী, সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের।

সরকারপক্ষের সদস্যদের প্রবল প্রতিরোধের মধ্যে রাহুল বলেন, তাঁরা একসময় এই চক্রব্যূহ ভেঙেছিলেন সাধারণ মানুষকে ১০০ দিনের কাজ পাইয়ে দিয়ে, দেশে সবুজ বিপ্লব এনে, সংবিধান রক্ষা করে, স্বাধীনতা এনে। ভবিষ্যতেও এই চক্রব্যূহ ভাঙা হবে জাত গণনা করে, ফসলের ন্যায্যমূল্যের অধিকারের আইন বৈধতার মধ্য দিয়ে।

রাহুলের ভাষণে সমালোচনার একটি অভিমুখ ছিল সেনাদের জন্য আনা ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প। রাহুলের দাবি, এই প্রকল্প সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দিচ্ছে। চুক্তির সেনারা শহিদ হলে অন্যদের মতো প্রাপ্য মর্যাদা ও সুযোগ–সুবিধা পান না। রাহুলের প্রতিশ্রুতি, তাঁরা ক্ষমতায় এলে গোটা প্রকল্পই তুলে দেবেন।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বিরোধী নেতার ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এভাবে দেশের সেনাদের মনোবল ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। জবাবে রাহুল বলেন, তিনি নন, বরং খোদ প্রতিরক্ষামন্ত্রীই সংসদে অগ্নিবীর নিয়ে অসত্য বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, নিহত অগ্নিবীরদের এক কোটি রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল। রাহুল বলেন, সরকার এক কোটি রুপি ক্ষতিপূরণ দেয়নি। যতটুকু দেওয়া হয়েছে, তা বিমার টাকা।