উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখন্ডের মতো হিমাচল প্রদেশেও কি বিজেপি দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসবে? এ জল্পনায় ভর দিয়ে আজ শনিবার উত্তর ভারতের এই পাহাড়ি রাজ্যে শুরু হয়েছে বিধানসভার ভোট গ্রহণ। ৬৮ সদস্যের বিধানসভায় পাঁচ বছর আগে বিজেপি জিতেছিল ৪৪ আসন। কংগ্রেসের প্রাপ্তি ছিল ২১।
৩৭ বছর ধরে হিমাচল প্রদেশে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর শাসকের পরিবর্তন ঘটে চলেছে। এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে এ রাজ্যের রাজনৈতিক রেওয়াজ। পার্শ্ববর্তী রাজ্য উত্তরাখন্ড ও উত্তর প্রদেশের রেওয়াজও ছিল এমনই। কিন্তু ওই দুই রাজ্যেই গত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি সে রেওয়াজ ভেঙে দ্বিতীয় দফায় শাসনের অধিকার আদায় করেছে। হিমাচল প্রদেশেও তা করতে বিজেপি মরিয়া। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্যে প্রচারে গিয়ে বারবার সে কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, উন্নয়ন ও প্রগতির স্বার্থে ‘রাজ’, নয় ‘রেওয়াজ’–এর পরিবর্তন জরুরি।
হিমাচল প্রদেশের ভোট হচ্ছে এক দফায়। এ বছরের শেষ ভোটটি হবে গুজরাটে, ডিসেম্বরে, দুই দফায়। দুই রাজ্যের ফলাফল ঘোষণা একসঙ্গে। ৮ ডিসেম্বর।
‘দেবভূমি’ হিমাচল প্রদেশে বিজেপির চ্যালেঞ্জার কংগ্রেস। আম আদমি পার্টি ভোটে দাঁড়ালেও অনেক দিন আগেই তারা রণে ভঙ্গ দিয়ে নজর দিয়েছে গুজরাটে। ফলে, কার্যত লড়াই বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের।
বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার রাজ্য হিমাচল প্রদেশ। রেওয়াজ বদলাতে তাঁর চেষ্টার কসুর নেই। কিন্তু বিজেপির সমস্যা বাড়িয়েছেন বিদ্রোহীরা। ২১ আসনে টিকিট না পেয়ে বিদ্রোহীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে কারও কারও সঙ্গে কথা বলেও প্রার্থী পদ প্রত্যাহারে ব্যর্থ হয়েছেন। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রেমকুমার ধুমলকেও এবার বিজেপি প্রার্থী করেনি; যদিও তিনি বলেছেন স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়িয়েছেন।
বিদ্রোহীদের সংখ্যা কংগ্রেসেও কম নয়। কিন্তু এই দলের তার চেয়েও বড় সমস্যা নেতৃত্বহীনতা। কংগ্রেসে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদার অন্তত তিনজন। এই কারণে দল আগে থেকে কাউকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেনি। হিমাচল জেতার পূর্ণ দায়িত্ব কংগ্রেস ছেড়ে দিয়েছে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রের ওপর। প্রচারের শেষ দিকে নতুন সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে রাজ্যে গিয়েছেন। রাহুল গান্ধী ব্যস্ত ভারত জোড়ো যাত্রায়। হিমাচল প্রদেশই নয়, গুজরাটেও তিনি প্রচারে যাবেন না। সোনিয়া গান্ধী অসুস্থ। প্রচারে নেই তিনিও। কংগ্রেসের হাল রাজ্যে কেমন, ভোটের আগে তা প্রকাশ পেয়েছে জি-২৩ গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা আনন্দ শর্মার বয়ানে। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, কংগ্রেসের প্রচার আরও জোরালো হওয়া উচিত ছিল।
হিমাচল প্রদেশে সরকারি কর্মীর সংখ্যা দুই লাখ। তাঁদের সমর্থন আদায়ে কংগ্রেস ২০০৪ সালের পেনশন প্রকল্প চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিজেপির প্রতিশ্রুতি আট লাখ চাকরি ও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। দানখয়রাতের রাজনীতিতে কোনো দলই কারও থেকে পিছিয়ে নেই। ভোটের চার দিন আগে কংগ্রেসের ২৬ জন নেতা দল বদলে বিজেপিতে যোগ দেন। নির্বাচনী সমীক্ষা অনুযায়ী লড়াই তবু সমানে সমানে। ভোট শতাংশ ও আসন প্রাপ্তির হিসাবে বিজেপি সামান্য এগিয়ে। এ ভোটে রাজ্যের রেওয়াজ অব্যাহত থাকলে, অর্থাৎ পাঁচ বছর পর ক্ষমতার বদল হয়ে কংগ্রেস এলে গুজরাটের ভোটে এর প্রভাব পড়তে পারে। বিজেপি তাই হিমাচল প্রদেশ দখলে রাখতে মরিয়া।