মোদি দুই রাজ্যকে খুশি করতে ‘কুর্সি বাঁচাও’ বাজেট দিয়েছেন, বিরোধীদের ক্ষোভ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিছবি : এএফপি

ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেটকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘কুর্সি বাঁচাও বাজেট’ অভিহিত করে বিরোধী পক্ষ আজ বুধবার সংসদ ভবনের ভেতরে ও বাইরে বিক্ষোভে ফেটে পড়ল। তাদের অভিযোগ, এই বাজেটের মূল লক্ষ্য অন্ধ্র প্রদেশ ও বিহারকে খুশি রাখা, যাতে দুই শরিক তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ও জনতা দল সংযুক্ত (জেডিইউ) জোট না ছাড়ে। দুই দলের দুই মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমার সরকার থেকে সমর্থন তুলে না নেন।

বিরোধীদের অভিযোগ, বাজেট প্রস্তুতির সময় প্রধানমন্ত্রী মোদির একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল দুই শরিককে সন্তুষ্ট রাখা, সংসদে যাঁদের মোট সদস্য ২৮। এ কারণে এই বাজেটে অন্য সব রাজ্য বঞ্চিত হয়েছে। এমনকি চলতি বছরের শেষে যে চার বিধানসভার ভোট রয়েছে, যেমন মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খন্ড ও জম্মু–কাশ্মীর, উপেক্ষিত হয়েছে তারাও।

এই বঞ্চনার প্রতিবাদে আগামী শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠকে কংগ্রেসের কোনো মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন না। এমনকি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনও ওই বৈঠক বর্জন করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার দিল্লিতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাসভবনে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সেই বৈঠকে উপস্থিত তৃণমূল কংগ্রেসের দুই প্রতিনিধি ডেরেক ওব্রায়েন ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানান, তাঁদের নেত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীতি আয়োগের বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। সেই বৈঠকে তিনি বিরোধী রাজ্যের বঞ্চনার ইতিবৃত্ত তুলে ধরবেন।

ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন, আম আদমি পার্টির পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান (দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জেলে), কেরালার সিপিএম মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন কী করবেন, তা এখনো জানা যায়নি। নীতি আয়োগের ওই বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।

আজ সকালে সংসদের অধিবেশন শুরুর আগেই ইন্ডিয়া জোটের সাংসদেরা সংসদ ভবনের দরজার সামনে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তাতে অংশ নেন সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে, তৃণমূল কংগ্রেস, ডিএমকে, এসপি, এনসিপি (শরদ), শিবসেনাসহ (উদ্ধব) ইন্ডিয়া জোটের সদস্যরা। প্ল্যাকার্ডগুলোয় লেখা বাজেটে বঞ্চিত হওয়ার কথা। বিরোধীরা এই বাজেটকে ‘লজ্জার’, ‘জনবিরোধী’ ও ‘ধ্বংসাত্মক’ বর্ণনা করে বলেন, মোদির চিন্তায় সরকারের অস্তিত্বরক্ষা ছাড়া আর কিছু ছিল না। তাই সবার স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু দুই শরিকের কথা তিনি ভেবেছেন। রাহুল বলেন, ‘এটা মোদির কুর্সি বাঁচানোর বাজেট।’

রাজ্য পুনর্গঠনের পর থেকেই বিহার ও অন্ধ্র প্রদেশ বিশেষ মর্যাদার দাবিতে সরব। যদিও মোদি সরকার সেই দাবিকে সেভাবে আমল দেয়নি। এবার দুই সহযোগী সেই দাবি জোরালোভাবে না তুললেও বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ পেতে সচেষ্ট ছিলেন। এই বাজেটে মোদির নির্দেশে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণও তাই দরাজহস্ত হয়েছেন। অন্ধ্র প্রদেশের অমরাবতীতে নতুন রাজধানী গড়ে তোলার জন্য ১৫ হাজার কোটি রুপি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পোলাবরম সেচ প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে সব ধরনের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছেন। এ ছাড়া ঘোষণা করা হয়েছে একাধিক বিদ্যুৎ, সেচ, রেল ও সড়ক যোগাযোগ প্রকল্প। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বিশেষ শিল্প তালুক গঠনের। তা ছাড়া জানিয়েছেন, রাজ্যের পিছিয়ে পড়া রায়ালসীমা ও উপকূলবর্তী এলাকার উন্নয়নে অর্থ দিতেও সরকার প্রস্তুত।

বিহারের জন্য অবকাঠামো নির্মাণে বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি রুপি, যার মধ্যে সড়ক নির্মাণে খরচ হবে ২৬ হাজার কোটি। এই অর্থে তিনটি সড়ক তৈরি হবে। বক্সারে গঙ্গার ওপরে তৈরি করা হবে একটি সেতু। এক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে বরাদ্দ করা হয়েছে ২১ হাজার কোটি রুপি। বন্যা নিয়ন্ত্রণে দেওয়া হচ্ছে সাড়ে ১১ হাজার কোটি। এ ছাড়া হবে একটি বিমানবন্দর, নতুন মেডিকেল কলেজ ও ক্রীড়া কাঠামো। দুই মুখ্যমন্ত্রী বাজেট ভাষণের পর তাঁদের সন্তুষ্টি চেপে রাখতে পারেননি। নীতীশ বলেছেন, বিশেষ মর্যাদার দাবি অতীত। বর্তমান হলো বিশেষ আর্থিক সহায়তা, যা কেন্দ্র দিয়েছে। আর চন্দ্রবাবু বলেছেন, রাজ্য এবার নতুন রাজধানী পাবে।

দুই শরিককে খুশি করার এই বাজেটের মধ্যেই শোনা যাচ্ছে অন্যদের দীর্ঘশ্বাস। বিশেষ করে ভোটমুখী চার রাজ্য, যেখানে লোকসভা ভোটের পর বিজেপি যথেষ্ট নড়বড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির এক নেতা বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও ঝাড়খন্ড নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনা কী তা বোঝা গেল না। বাজেট ভাষণে তিন রাজ্যের নামই অনুচ্চারিত রইল। অথচ তিন রাজ্যেই আমাদের হাল যথেষ্টই নাজুক।’