গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় বিজেপির হাতেই রইল
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার প্রধান চার মন্ত্রণালয়ই বিজেপির হাতে থাকছে। শুধু তা–ই নয়, ওই চার গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রীরাও একই থাকছেন। অর্থাৎ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকছেন রাজনাথ সিং, অর্থ মন্ত্রণালয়ে নির্মলা সীতারমণ, পররাষ্ট্রে এস জয়শঙ্কর এবং স্বরাষ্ট্রে অমিত শাহ।
অমিত শাহকে স্বরাষ্ট্র থেকে সরানোর যে দাবি শরিকদের কেউ কেউ তুলেছিল বলে শোনা যাচ্ছিল, তা যদি সত্যি হয়েও থাকে, তাহলে বলা ভালো, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেই দাবিকে আদৌ আমল দেননি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের কাছে রাখছেন পারমাণবিক শক্তি, মহাকাশ, পার্সোনেল, জন–অভিযোগ ও পেনশন মন্ত্রণালয়ের মতো বিভাগ—যেগুলো ১০ বছর ধরে তিনিই দেখাশোনা করছেন।
গতকাল সোমবার বিকেলে ৭ লোককল্যাণ মার্গের বাসভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে ডাকা প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, সরকার ও মন্ত্রণালয় পরিচালনার ধারাবাহিকতায় বড় কোনো পরিবর্তন করা হবে না। তবে জোট সরকারের বাধ্যবাধকতা মেনে সামান্য কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
ওই বৈঠকের পরই সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয় বণ্টন–সংক্রান্ত তথ্য গণমাধ্যমে আসতে থাকে। রাতে সরকারিভাবে মন্ত্রিসভার পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করা হয়। সেই অনুযায়ী প্রধান চারটি মন্ত্রণালয় ছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর বিজেপির মন্ত্রীদের হাতে রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামান্য পরিবর্তনও লক্ষণীয়। যেমন অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নির্মাণ মন্ত্রণালয় নিতিন গড়কড়ির হাতেই রাখা হলো। তাঁর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে দুজন প্রতিমন্ত্রীকে। তাঁরা হলেন উত্তরাখন্ড থেকে নির্বাচিত বিজেপির অজয় টামটা ও দিল্লি থেকে জয়ী হর্ষ মালহোত্রা। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) ঘনিষ্ঠ নিতিন বিজেপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মোদির অন্ধ অনুগামী নন বলেই পরিচিত।
এবার নতুন করে মন্ত্রিসভায় এসেছেন বিজেপির বিদায়ী সভাপতি জগৎ প্রতাপ (জেপি) নাড্ডা। মোদির প্রথম মন্ত্রিসভায় তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। এবার ফিরলেন সেই স্বাস্থ্যে। সঙ্গে বাড়তি দায়িত্ব কেমিক্যাল ও রসায়ন মন্ত্রণালয়ের। মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানার দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে শিবরাজ সিং চৌহান ও মনোহরলাল খাট্টারকেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিবরাজ পেয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়, মনোহরলাল বিদ্যুৎ, গৃহনির্মাণ ও নগর উন্নয়ন দপ্তর।
কিরেন রিজিজু পালন করবেন সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আগের মন্ত্রিসভায় এই দায়িত্বে ছিলেন প্রহ্লাদ যোশি। কিন্তু বিরোধীদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ততটা মধুর ছিল না। তাঁকে দেওয়া হয়েছে নতুন মন্ত্রণালয় খাদ্য, উপভোক্তাবিষয়ক ও নবায়নযোগ্য শক্তি মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রিসভার প্রবীণতম সদস্য বিহারের হিন্দুস্তান আওয়ামি মোর্চার (হাম) নেতা ৭৪ বছর বয়সী জিতেন রাম মাঞ্ঝি পেয়েছেন ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রণালয়। তাঁর প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন কর্ণাটক থেকে নির্বাচিত বিজেপির মহিলা সদস্য শোভা করন্দলাজে। ওই রাজ্যের জেডি–ইউ নেতা রাজীব রঞ্জন (লাল্লন) সিং পেলেন পঞ্চায়েতি রাজ, মৎস্য ও পশুপালন মন্ত্রণালয়।
টিডিপি থেকে পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন রামমোহন নাইডু। মন্ত্রিসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য তিনি। বয়স মাত্র ৩৬। তাঁকে দেওয়া হয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়। এই দায়িত্বে এত দিন ছিলেন মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তাঁকে দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ টেলিকম মন্ত্রণালয়।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন অনুরাগ ঠাকুর। নতুন মন্ত্রী হলেন অশ্বিনী বৈষ্ণ। সেই সঙ্গে তিনি রেলওয়ের দায়িত্বে থাকছেন। নাড্ডার জন্য হিমাচল প্রদেশের অনুরাগ ঠাকুর মন্ত্রিসভায় স্থান পেলেন না। এই পাহাড়ি রাজ্যের মোট আসন চার। সেখান থেকে দুজনকে মন্ত্রী করা সম্ভব হয়নি।
কর্ণাটকের মিত্র দল জেডিএসের এইচ ডি কুমারস্বামী হয়েছেন ভারী শিল্প ও ইস্পাতমন্ত্রী। চিরাগ পাসোয়ান হলেন খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী। ধর্মেন্দ্র প্রধান শিক্ষামন্ত্রী থাকছেন। ভূপেন্দ্র যাদব পরিবেশমন্ত্রী। আমেথিতে হেরে যাওয়া স্মৃতি ইরানির নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হলো ঝাড়খন্ড থেকে জয়ী বিজেপির অন্নপূর্ণা দেবীকে।