ভারতে দুই শিশুকে যৌন হয়রানি, বিক্ষোভ ঠেকাতে ইন্টারনেট বন্ধ

ন্যায়বিচারের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা গতকাল মঙ্গলবার থানে জেলার বাদলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কয়েক ঘণ্টা রেললাইন অবরুদ্ধ করে রাখেনছবি: এএনআই

ভারতে চার বছর বয়সী দুই শিশু শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মুম্বাইয়ের কাছের বাদলাপুর শহরে আজ বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। কর্তৃপক্ষ সেখানকার সব স্কুল ও ইন্টারনেট-সেবা বন্ধ করে দিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে দেশজুড়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ চলছে। এর মধ্যে বাদলাপুরে দুই শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগে এই বিক্ষোভের খবর এল।

নিউজ চ্যানেল এবিপির খবরে বলা হয়, কর্তৃপক্ষ স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের জমায়েত বা বিক্ষোভ ঠেকাতে দ্বিতীয় দিনের মতো ইন্টারনেট-সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এই বিক্ষোভ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উল্লেখ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ সিন্ধ বুধবার বলেন, অভিযোগটির বিচার দ্রুত বিচার আদালতে হতে পারে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, এ ঘটনায় স্কুলের এক পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে জানতে বলদাপুর পুলিশ কর্মকর্তাদের রয়টার্সের পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার কল করা হলে ও খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ন্যায়বিচারের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা গতকাল মঙ্গলবার থানে জেলার বাদলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে কয়েক ঘণ্টা রেললাইন অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে থানের পুলিশ ৯ ঘণ্টা পর লাঠিপেটা করে বিক্ষোভকারীদের সরাতে সক্ষম হয় বলে হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়। মুম্বাই থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে বলদাপুর শহরটি।

ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্রে এ বছরের শেষ নাগাদ বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। এখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি পার্টি বিরোধী জোটের কঠোর  প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়বেন।

আজ মুম্বাইয়ে এক বিক্ষোভে লোকসভার কংগ্রেস সদস্য বর্ষা গায়কোয়াড় বলেন, বিরোধী দলগুলো ২৪ আগস্ট রাজ্যজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।

দুই শিশুর সঙ্গে কী ঘটেছিল

হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়, চার বছর বয়সী ওই দুই শিশু বাদলাপুর শহরের সামনের সারির একটি প্রাক্‌-প্রাথমিক স্কুলে পড়ে। ওই স্কুলে ছেলে-মেয়ে সবাই একসঙ্গে পড়ে। অভিযোগে বলা হয়, চলতি মাসের ১২ ও ১৩ তারিখ অক্ষয় সিন্ধে নামের এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী ওই দুই শিশুকে যৌন হয়রানি করেন। মেয়েদের শৌচাগারে এ ঘটনা ঘটে। সেখানে তেমন নারী তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন না। অভিযুক্ত অক্ষয়কে ১ আগস্ট চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

এই দুই শিশুর একজন বাড়িতে গিয়ে তার মা-বাবার কাছে স্পর্শকাতর জায়গায় ব্যথা ও তার সঙ্গে কী হয়েছে, তা খুলে বলে। ওই অভিভাবক অবাক হন, যখন তাঁরা জানতে পারেন একই অভিজ্ঞতা আরেক শিশুরও হয়েছে। এ নিয়ে ১৬ আগস্ট রাতে থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এফআইআরের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়, ১৩ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টার  মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, শিশুটি ভীতসন্ত্রস্ত ছিল। সে তার বাবা-মাকে বলেছে, স্কুলের এক দাদা (বড় ভাই) তার পোশাক খুলে তাকে আপত্তিকরভাবে স্পর্শ করেছে। পরিবারটির দাবি, তারা অভিযোগ করার পরও ১২ ঘণ্টায়ও তা নথিভুক্ত হয়নি।

স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় স্কুলের অধ্যক্ষ ও তিনজন স্টাফকে বরখাস্ত করেছে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে আসছেন।