২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

লবিস্ট দিয়েও ইইউর প্রস্তাব ঠেকাতে পারলেন না মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ বৃহস্পতিবার ফ্রান্সে পৌঁছান
ছবি: এএফপি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জোড়া বিড়ম্বনাকে সঙ্গী করে ফ্রান্স সফর শুরু করলেন। আজ বৃহস্পতিবার তিনি যখন প্যারিসে অবতরণ করেছেন, ঠিক তখনই দেশটির স্ট্রাসবুর্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্টে গৃহীত হয়েছে মণিপুরসংক্রান্ত এক প্রস্তাব। তাতে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতা মণিপুরের সাম্প্রতিক সহিংসতায় ইন্ধন জুগিয়েছে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিভাজনের রাজনীতি সেখানে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভারত সরকারকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে প্রস্তাবে। একই সঙ্গে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে এই প্রস্তাব যাতে না উঠতে পারে এবং মণিপুরের সহিংসতা নিয়ে যাতে আলোচনা না হয়, সে জন্য চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি ভারত।

ইইউ পার্লামেন্টে যাতে ওই প্রস্তাব উত্থাপিত না হয়, সে জন্য ব্রাসেলসের একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দেনদরবার করতে। মোদির সফর শুরুর আগে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘সদস্যদের কাছে ভারত নিজের বক্তব্য পেশ করেছে। মণিপুরে যা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’

ভারত একেবারেই চায়নি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ভিনদেশের পার্লামেন্টে চর্চা হোক; সরকার ও শাসক দল বিজেপি সমালোচিত হোক। কিন্তু মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার মতো বিষয় নিয়ে স্পর্শকাতর ইউরোপীয় ইউনিয়ন তা অগ্রাহ্য করেছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এটা তাই অবশ্যই বিড়ম্বনার।

মণিপুরে দুই মাসের বেশি সময় ধরে পরিস্থিতি অশান্ত। প্রধানত হিন্দু মেইতি ও খ্রিষ্টান কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে হানাহানিতে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুহীন। হাজারের বেশি ঘরবাড়ি, ২৫০টি গির্জা ও মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শরণার্থীশিবিরগুলো উপচে পড়ছে।

মোদির জন্য দ্বিতীয় বিড়ম্বনা হলো, ২০১৫ সালের রাফাল চুক্তি। সে বছর তিনি ফ্রান্স সফরে গিয়েছিলেন। ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য রাফাল যুদ্ধবিমান কেনাবেচা নিয়ে পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারের চুক্তি বাতিল করে তিনি নতুন চুক্তি করেছিলেন। আগের ১২৬টির বদলে নতুন চুক্তি হয়েছিল ৩৬টি রাফাল কেনার। এ নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল দুর্নীতির। তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল বিরাট বিতর্ক। সিবিআই তদন্তের দাবি সরকার মানেনি। সুপ্রিম কোর্টও তদন্তের নির্দেশ দেয়নি।

কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছিল ফ্রান্সে। অভিযোগ ছিল, রাফাল বিক্রির জন্য যুদ্ধবিমানটির নির্মাতা ‘দাসো অ্যাভিয়েশন’ সুষেণ গুপ্ত নামের এক ভারতীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীকে ঘুষ দিয়েছিল। সেই পুরোনো বিতর্ক নতুনভাবে উঠে এসেছে। ফ্রান্সের এক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সুষেণ গুপ্তর বিরুদ্ধে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা যে তদন্ত করেছে, তার প্রতিবেদন ফ্রান্সের ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে পাঠিয়েছেন।

পাশাপাশি ওই সংবাদমাধ্যম দাসো অ্যাভিয়েশনের ভারতীয় অংশীদার শিল্পপতি অনিল আম্বানির কর ছাড় প্রসঙ্গেও নতুন তথ্য জানিয়েছে। অনিল আম্বানি ২০১৫ সালে মোদির ফ্রান্স সফরের সঙ্গী ছিলেন। তাঁর ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়েও সে সময় প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল।

এবারের ফ্রান্স সফরেও নতুন করে রাফাল যুদ্ধবিমান কিনতে ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তি করবেন মোদি। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ফ্রান্স ও আমিরাত সফরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের নেতৃত্বে প্রতিরক্ষা অর্জন পর্ষদের (ডিএসি) বৈঠকে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র অনুমোদন পায়।

নৌবাহিনীর জন্য রাফাল যুদ্ধবিমান ছাড়া এ সফরে ফ্রান্স থেকে আরও তিনটি ‘স্করপিন’ সাবমেরিন কিনবে ভারত। ডিএসি সে বিষয়েও অনুমোদন দিয়েছে বলে সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এসব সাবমেরিন ফরাসি প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে ভারতে তৈরি করা হবে। রাফাল যুদ্ধবিমান ও স্করপিন সাবমেরিন কিনতে কত খরচ পড়বে, সে বিষয়ে সরকারি বিবৃতিতে নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। বলা হয়েছে, অন্যান্য দেশের দাম খতিয়ে দেখে তা ঠিক করা হবে।