জম্মু–কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনের নয়া আকর্ষণ নিষিদ্ধ দলটি
জম্মু–কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনের নতুন আকর্ষণ হয়ে উঠেছে নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামির সদস্যদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত। ন্যাশনাল কনফারেন্সের (এনসি) শীর্ষ নেতৃত্ব এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে। সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পিডিপিও। এই দলের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি করেছেন, ওই সংগঠনের ওপর জারি থাকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার সেই ভাবনা থেকে পিছিয়ে এসেছে।
জামায়াতে ইসলামির ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত উপত্যকার রাজনীতিকে চনমনে করে তুলেছে। এতকাল যারা নির্বাচন বর্জনের কথা বলে এসেছে, তারাই এখন ভারতীয় গণতন্ত্র ও সংবিধানের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে জনমনে কেমন প্রতিক্রিয়া হবে, সেই জল্পনা বিভিন্ন দলে শুরু হয়েছে। কোনো কোনো মহল যথেষ্ট আশাবাদী, গত লোকসভা ভোটে বারামুল্লা কেন্দ্রে বিচ্ছিন্নতাবাদী কারাবন্দি নেতা প্রকৌশলী রশিদের বিপুল জয়ে। তাঁরা মনে করছেন, এ যাবৎ যেমন ভোট হয়ে এসেছে, এবারের ভোট হবে তার চেয়ে আলাদা। রশিদ দুই লাখের বেশি ভোটে হারিয়েছেন সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও এনসি নেতা ওমর আবদুল্লাহকে।
জম্মু–কাশ্মীর বিধানসভার ৯০ আসনের নির্বাচন হবে তিন পর্বে। ১৮ সেপ্টেম্বর, ২৫ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর। ফল ঘোষণা হবে ৪ অক্টোবর।
জামায়াতে ইসলামির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের চিন্তাভাবনা কিছুদিন আগেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চেয়েছিলেন, নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যাতে ওই সংগঠন রাজনীতির মূল স্রোতে ফিরতে পারে। দেশের সংবিধানের প্রতি আনুগত্য দেখাতে পারে; কিন্তু আরএসএসের আপত্তিতে তাঁকে পিছিয়ে যেতে হয়। জামায়াতে ইসলামির নেতাদের সঙ্গে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক বৈঠকও হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ ওই সংগঠনের নেতৃত্ব ঠিক করেন, তাঁদের সদস্যরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন।
মেহবুবা মুফতির মতো এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন এনসি নেতা ওমর আবদুল্লাহও। তবে তিনি এক মোক্ষম প্রশ্নও রেখেছেন। শ্রীনগরে এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, জামায়াত নেতাদের সুবুদ্ধি হয়েছে ভালো কথা। তাঁরা ভোটে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেশের রাজনীতির মূল স্রোতে অবগাহন করবেন ঠিক করেছেন। এতে বোঝা যাবে, তাঁদের পেছনে মানুষের সমর্থন কতটা; কিন্তু তাঁদের অবশ্যই এই জবাবদিহি করতে হবে, ৩০–৪০ বছর ধরে তাঁদের ভোট বর্জনের ডাক ঘিরে এত হানাহানি ও রক্তপাত কেন ঘটল। এই অপরাজনীতি তাঁদের কীই–বা দিল।
ওমর বলেন, এনসি আজ পর্যন্ত কোনো দিন নির্বাচন বর্জনের ডাক দেয়নি। কখনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেনি। সব সময় ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছে। সংবিধানের বাইরে জম্মু–কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের কথা বলেনি। সে জন্য অনেক ক্ষতি দলকে স্বীকার করতে হয়েছে; কিন্তু তাঁরা সব সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর সুরে সুর মিলিয়ে ‘ইনসানিয়াৎ (মানবতা), জমুরিয়াৎ (গণতন্ত্র) ও কাশ্মীরিয়াৎ (কাশ্মীরি সংস্কৃতি) ’ রক্ষার কথা বলে এসেছেন।
জামায়াতে ইসলামির উদ্দেশে ওমর বলেন, মানুষের চরম দুর্দশা–দুর্ভোগের কারণ ছিল, যারা এতকাল বলে এসেছে জম্মু–কাশ্মীর ভারতের অংশ নয়, তারা আজ ভোটে দাঁড়াতে চাইছে; কিন্তু এই প্রশ্ন উঠবেই যে তা হলে এত দিন ধরে এত হানাহানি এত রক্তপাত এত ধ্বংসযজ্ঞ কেন চলল? এত মানুষকে কেন মরতে হলো?
সমালোচনা সত্ত্বেও ওমর আবদুল্লাহ মনে করেন, ভালো হতো জামায়াত নেতাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে। তাতে নিজেদের প্রতীকে তাঁরা লড়াই করতে পারতেন।
ওমর বলেন, বিজেপি দাবি করছে, ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজ হয়েছে বলে মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে বের হচ্ছে; সেটা ঠিক নয়, মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে আসছে কারণ, এত দিন যারা বাধা দিত, সেই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এখন ভোটে দাঁড়াতে আগ্রহী হয়েছে বলে।