জি-২০ সম্মেলন ঘিরে ‘লকডাউনে’ থাকবে নয়াদিল্লি
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন ঘিরে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লির বিস্তীর্ণ এলাকা থাকবে কার্যত অঘোষিত কারফিউর অধীনে। সেখানে জনসাধারণের প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ থাকবে।
এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর। এ সময় কার্যত লকডাউনের চেহারা নেবে রাজধানী নয়াদিল্লি। যদিও লকডাউন শব্দে আপত্তি জানিয়ে দিল্লি পুলিশ বলছে, সম্মেলনের ওই কয়েক দিন নয়াদিল্লির জনজীবন শুধু প্রয়োজনের খাতিরে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লির সব সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি দপ্তর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। প্রগতি ময়দানে সম্মেলনস্থল ঘিরে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে থাকা সব ধরনের দোকানপাটও ওই তিন দিন বন্ধ থাকবে।
শুধু তা–ই নয়, ওই এলাকার মধ্যে সরকারি–বেসরকারি গাড়ি চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অনুমতিপত্র ছাড়া কোনো গাড়ি ওই এলাকায় চলাচল করতে পারবে না। গতকাল সোমবারই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওই তিন দিন ‘নিউ দিল্লি’ জেলার কোথাও আমাজন, জোমাটো বা সুইগির মতো কোনো অনলাইন সংস্থা কোনো পণ্য বা খাবার সরবরাহ করতে পারবে না।
দিল্লি মেট্রো রাজধানীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ‘লাইফলাইন’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সম্মেলনের জন্য তিন দিন দিল্লির মেট্রোর ৩৯টি স্টেশনের ৬৯টি প্রবেশপথ পুরোপুরি বন্ধ রাখা হবে। বিমানবন্দর থেকে যে পথ দিল্লি শহরের প্রাণকেন্দ্রে যায়, সেই জাতীয় সড়কও সাধারণের জন্য প্রায় নিষিদ্ধ করা হচ্ছে ওই কদিন।
সরকারের দাবি, এই সবকিছু করা হচ্ছে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে। ঘোষিত এই দাবির পাশাপাশি রয়েছে অন্য এক সংশয়ও। জাতিসংঘের আসর কিংবা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন উপলক্ষে অনেক সময় বিক্ষুব্ধ মানুষদের সমাবেশ করতে দেওয়া হয়। সম্মেলন চলাকালে গণতান্ত্রিক রীতি মেনে শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করা হয়।
কিন্তু তেমন কেউ কিছু দিল্লিতে করুক, এটা ভারত সরকার একেবারেই চায় না। জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে দিল্লিতে বিক্ষোভ কিংবা ভিন্নমত প্রকাশ ঠেকাতে সরকার চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না। কিছুদিন আগে বিরোধী গোষ্ঠীর আয়োজন করা ‘উই ২০’ অনুষ্ঠান সরকার বন্ধ করে দিয়েছে।
সৌন্দর্যবর্ধন
ভারতকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে এই সম্মেলন উপলক্ষে দিল্লিকে সাজানো হয়েছে। মূল রাস্তাগুলো ঝকঝকে তকতকে করে তোলা হয়েছে। কোথাও কোনো খানাখন্দ নেই। সৌন্দর্য বাড়াতে রাস্তাগুলোর দুই পাশে বসানো হয়েছে ফুল ও বাহারি গাছের টব। তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম ঝরনা। বসানো হয়েছে নানা রকমের ভাস্কর্য।
প্রগতি ময়দান নতুন করে সাজানো হয়েছে। ১২৩ একর জমির ওপর ২ হাজার ৭০০ কোটি রুপি খরচ করে তৈরি করা হয়েছে ‘ভারত মন্ডপম’। এখানেই হবে শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে কনভেনশন সেন্টার, প্রদর্শন কক্ষ, মিডিয়া সেন্টার।
রাজধানীর দেয়ালগুলোতে আঁকা হয়েছে উজ্জ্বল রঙিন ছবি ও ম্যুরাল। রঙিন ব্যানারে ছেয়ে গেছে দিল্লি। এসব ব্যানারে স্থান পেয়েছে জি-২০–এর লোগো এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সহাস্য মুখ।
এদিকে ইতিমধ্যেই রাজধানীর ফুটপাতবাসীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে দরিদ্র মানুষের ঝুপড়ি। আন্দোলনকর্মীদের অভিযোগ, সৌন্দর্যবর্ধনের নামে দরিদ্রদের বস্তি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যদিও সরকারের দাবি, এটা ছিল অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ।
পশুপ্রেমীদের অভিযোগ, অতিথিদের চোখে যাতে বেওয়ারিশ কুকুর নজরে না আসে, সে জন্য ধরপাকড় চালানো হচ্ছে। নিউ দিল্লির আরেকটি ‘উপদ্রব’ বানর। অভিযোগ, বানর ধরার অভিযানও চালানো হচ্ছে। বানরের উপদ্রব বন্ধে বিভিন্ন জায়গায় হনুমানের প্রতিকৃতি বসানো হয়েছে। হনুমানকে ভয় পায় বানর।
অংশ নিচ্ছেন শেখ হাসিনা
এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর মতো নেতারা।
তবে থাকছেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। সম্মেলনে রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। আর চীনের হয়ে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং।
এ ছাড়া সম্মেলনে বাংলাদেশসহ নয়টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে বিশেষ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।