মণিপুরে জঙ্গি অনুপ্রবেশ নিয়ে নিরাপত্তা উপদেষ্টার মন্তব্যে বিভ্রান্তি

মণিপুরের সংকটজনক নিরাপত্তা পরিস্থিতির মধ্যে নতুন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিং। ভারতের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর তিনি বলেছিলেন, ৯০০ কুকি জঙ্গি মিয়ানমার থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে। এই জঙ্গিরা ২৮ সেপ্টেম্বর নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে। যতক্ষণ না ভুল প্রমাণিত হচ্ছে, ততক্ষণ এই তথ্য এক শ শতাংশ সঠিক ধরতে হবে।

ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানায়, নিরাপত্তা উপদেষ্টার মন্তব্য নিয়ে ভারতের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্সে’ পোস্টও দেওয়া হয়। পরে পোস্টটি সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্পিয়ার কোরের পক্ষ থেকে ওই পোস্টে লেখা হয়, নিরাপত্তা নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া ওই তথ্যের গুরুতর প্রভাব রয়েছে। নিরাপত্তা উপদেষ্টার কার্যালয়কে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে শিগগিরই যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

একটি প্রতিরক্ষা সূত্র দ্য হিন্দুকে বলেছে, মণিপুরের নিরাপত্তা উপদেষ্টার দেওয়া তথ্য এখনো সেনাবাহিনীকে জানানো হয়নি।

বিষয়টিকে অবিশ্বাস্য বলে মন্তব্য করে ভারতের একজন নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক বলেন, ‘সরকারের নিরাপত্তাবিষয়ক দুটি শাখা নিরাপত্তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা করছে, এটা অবাস্তব বলে মনে হলেও সত্যি।’

মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নিরাপত্তাবিষয়ক এটি চিঠি নিরাপত্তা উপদেষ্টার দপ্তরে গিয়েছিল বলে জানা যায়। তার ভিত্তিতে মণিপুরে গোটা নিরাপত্তা পরিকাঠামোকে সতর্ক করা হয়। এ ছাড়া সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকতে বলা হয়। সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল আসাম রাইফেলস এবং সেনাবাহিনীকেও। এ চিঠির ফলে মণিপুরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

একটি সূত্র দ্য হিন্দুকে বলেছে, ‘একটা গল্প তৈরি করার চেষ্টা হয়েছিল। বলা হয়েছিল ৯০০ জঙ্গি ভারতে ঢুকেছে। এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

কুকি সংগঠনের প্রতিবাদ

ভারতের সেনাবাহিনীর স্পিয়ার কোরের মন্তব্যের এক দিন আগেই, কুকি সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ সামাজিক সংগঠন কুকি-ইম্পি এক বিবৃতি দেয়। তাতে বলা হয়, ৯০০ কুকি জঙ্গি মণিপুরে প্রবেশ করবে বলে যে কথা বলা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।

কুকি-ইম্পি তাদের বিবৃতিতে দাবি করেছে, কুলদীপ সিং-কে তাঁর গোয়েন্দা তথ্যের সূত্র প্রকাশ করতে হবে। ভারতের কোন নিরাপত্তা বা গোয়েন্দা সংস্থা থেকে কুকি জঙ্গি প্রবেশের তথ্য কুলদীপের কাছে এসেছে, তা–ও জানতে চেয়েছে কুকি-ইম্পি।

বিভিন্ন সরকারি নিরাপত্তা সংস্থার নাম করে কুকি-ইম্পি বলেছে, সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তারা এই ধরনের কোনো তথ্য সরকারকে দেয়নি। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ), ডিরেক্টরেট জেনারেল অব মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএমআই), সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী, আসাম রাইফেলস, আধা সামরিক বাহিনী সিআরপিএফ, ভারতের পররাষ্ট্রবিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা আরএডব্লিউ (র) এবং সাবসিডিয়ারি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, এই তথ্য কুলদীপ সিং পেলেন কোথায়, প্রশ্ন কুকি সংগঠনের।

কুকি-ইম্পি বলেছে, সংঘাতের যে কঠিন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, এই ধরনের তথ্য একদিকে সেই বাস্তবতাকে অস্বীকার ও বিকৃত করছে এবং অপর দিকে প্রমাণ করছে কীভাবে রাজ্য সরকার সহিংসতাকে আরও গভীর আকার দিচ্ছে।

নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ ধরে রাখার জন্য কুলদীপ সিং রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করছেন বলেও মন্তব্য করা হয়েছে বিবৃতিতে। কুকি-জোমি সম্প্রদায়কে একটি আক্রমণাত্মক এবং জঙ্গি জাতি হিসেবে উপস্থাপিত করার লক্ষ্যেই এটা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে কুকি-ইম্পি।