ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দুই মাসের প্রচার বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে উৎসাহিত করলেও আজ শনিবার সন্ধ্যায় এক্সিট পোল বা বুথফেরত জরিপ তাদের তীব্রভাবে আশাহত করল। দেশের যতগুলো গণমাধ্যম এই জরিপের দায়িত্ব নিয়েছিল, তাদের কেউই শাসক দল বিজেপির তৃতীয়বার সরকার গঠন নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় প্রকাশ করল না।
পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একাই পেয়েছিল ৩০৩ আসন, তাদের নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেয়েছিল ৩৫৩। এবার মনে করা হচ্ছিল, পালাবদল না হলেও ‘ইন্ডিয়া’ জোট বিজেপিকে যথেষ্ট বেগ দেবে। আগের তুলনায় বিজেপি ও এনডিএর আসন কমে যাবে। কিন্তু অধিকাংশ সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, এনডিএ এবার আগেরবারের তুলনায় তাদের আসনসংখ্যা বাড়াতে চলেছে, যদিও তা ‘৪০০ পার’ হচ্ছে না।
সব জরিপই বিজেপি ও এনডিএ–কে ৩৫৯ থেকে ৩৯৫ আসন দিয়েছে। ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে দিয়েছে ১২৫ থেকে ১৬১ আসন। প্রতিটি জরিপ অনুযায়ী, বিজেপি শুধু হিন্দি–বলয়ে তার অবস্থান ধরেই রাখেনি, তারা দক্ষিণেও ডানা বিস্তার করতে চলেছে। যেমন তামিলনাড়ু ও কেরালা। এই দুই রাজ্যে বিজেপি কখনো একার ক্ষমতায় আসন জেতেনি। এবার জরিপ অনুযায়ী, বিজেপি তামিলনাড়ুতে ১ থেকে ৩টি আসন পেতে পারে, কেরালায়ও পেতে পারে ২–৩টি আসন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবার প্রবলভাবে দক্ষিণমুখী হয়েছেন। যে বিজেপি কর্ণাটক ছাড়া দাক্ষিণাত্যে হিন্দি–বলয়ের দল বলে পরিচিত ছিল, এবারের ভোটে তা ঘোচানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। জরিপের ফল অন্তত সেটাই বলছে।
তবে কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আজ সন্ধ্যায় বৈঠক থেকে বেরিয়ে বুথফেরত জরিপ নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন, ইন্ডিয়া জোট ২৯৫ আসনে জয়ী হবে।
কর্ণাটকে গতবার বিজেপি একা জিতেছিল ২৫ আসন। এবার বুথফেরত জরিপে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি একাই সে রাজ্যে ৪৮ শতাংশ ভোট পাচ্ছে। ২৮ আসনের মধ্যে পেতে চলেছে ২০–২২ আসন।
বিহারে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মধ্যে কোনো টানাপড়েন ছিল না। বরং হাতে হাত ধরে আরজেডি, কংগ্রেস ও বামপন্থীরা লড়াই করেছিল। ইন্ডিয়া জোটের আশা ছিল, ৪০ আসনের এই রাজ্যে তারা অন্তত ২০টি জিততে পারবে। কিন্তু অধিকাংশ জরিপ অনুযায়ী, বিহারে ইন্ডিয়া জিততে চলেছে মাত্র ১০ থেকে ১৩টি আসন।
বিহারের মতো ‘ইন্ডিয়া’র সামান্য সাফল্য ঝাড়খন্ডে। সেখানে গতবার বিজেপি ও তার সহযোগীরা পেয়েছিল ১২টি। এবার সেখানে তারা কম করেও ৮টি আসন পেতে চলেছে বলে বুথফেরত জরিপের ধারণা। ছত্তিশগড়ের আদিবাসীরা পুরোপুরি বিজেপির পাশে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ জরিপ অনুযায়ী, এই রাজ্যের ১১টি আসনের সবই বিজেপির ঝুলিতে যেতে পারে। গতবার বিজেপি পেয়েছিল ৯টি।
কংগ্রেসকে আশাহত করতে চলেছে মধ্যপ্রদেশ। এই রাজ্যের ২৯ আসনের মধ্যে কংগ্রেস বড়জোর একটি আসন জিততে পারে বলে জরিপের ধারণা।
গুজরাট (২৬), রাজস্থান (২৫), দিল্লি (৭), হরিয়ানা (১০), হিমাচল প্রদেশ (৪) ও উত্তরাখন্ডের (৫) সব আসন গতবার বিজেপি জিতেছিল। জরিপ অনুযায়ী, এবারও সেই ছবির বিশেষ পরিবর্তন হচ্ছে না। ব্যতিক্রম রাজস্থান। কংগ্রেস এই রাজ্যে ৫–৭টি আসন জিততে চলেছে।
এবার উত্তর প্রদেশে ৮০ আসনের মধ্যে গতবার পাওয়া ৬২ আসন বিজেপি টপকে যেতে পারে কি না, সেদিকে ছিল সবার নজর। এই রাজ্যে বিজেপি ৭০ থেকে ৭৫ আসন পেতে পারে বলে কোনো কোনো জরিপে এসেছে।
পশ্চিমবঙ্গে ভালো ফল করতে পারে বিজেপি। রাজ্যে এবার ২৩ থেকে ২৭ আসন জিতে তৃণমূল কংগ্রেসকে দ্বিতীয় স্থানে নামিয়ে দিতে চলেছে তারা। একই রকম তারা আশাবাদী ওডিশা, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশ নিয়েও। জরিপ অনুযায়ী, তিন রাজ্যেই বিজেপির আশা পূর্ণ হচ্ছে। ওডিশায় তারা নিশ্চিতভাবে হতে চলেছে প্রথম দল।
তেলেঙ্গানায় বিআরএসকে চূর্ণ করে বিজেপি রাজনৈতিক পরিসর বড় করতে চলেছে। অন্ধ্র প্রদেশে তেলেগু দেশম পার্টির সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপি মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে।
এবারের অন্যতম ‘ব্যাটেল গ্রাউন্ড’ রাজ্য মহারাষ্ট্র। একমাত্র এই রাজ্যে এনডিএ ও ইন্ডিয়ার টক্কর জোরালো হয়েছে বলে জরিপের ধারণা। রাজ্যের ৪৮ আসন এবার এই দুই শিবিরের মধ্যে সমানভাবে ভাগাভাগি হতে চলেছে।
এবারের জরিপও বোঝাল, দেশের অধিকাংশ রাজ্যের ভোটার কেন্দ্রে শক্তপোক্ত সরকার চায়। টানা ১০ বছর শাসনের পরও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি জনগণের আস্থায় টোল পড়েনি।
এবারের ভোটে মূল নজর ছিল বিজেপি ৩০০ পার করে কি না এবং এনডিএ গতবারের মতো ৩৫০ আসনের বেশি আসন পায় কি না। অধিকাংশ জরিপ অনুযায়ী, দুটিই হওয়ার সম্ভাবনা। জরিপের সারাংশ, ৪ জুন গণনা শেষে নরেন্দ্র মোদিই শেষ হাসি হাসছেন। তৃতীয়বার ক্ষমতাসীন হয়ে তিনি জওহরলাল নেহরুকে স্পর্শ করছেন।