মণিপুরে আবার সহিংসতা, উদ্বেগ প্রশাসনের
ভারতের মণিপুর রাজ্যের পূর্ব ইম্ফল জেলার নিউ চেকওন অঞ্চলে নতুন করে অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা সোমবার চারটি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। এরপর কারফিউয়ের সময়সীমা পরিবর্তন করা হয়েছে। কারফিউ আগে সকাল ছটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত তুলে নেওয়া হয়েছিল। নতুন করে সহিংসতার পর পূর্ব ইম্ফল জেলায় এখন বেলা দুইটা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে।
মণিপুরে যে আরও ব্যাপক আকারে হিংসা ছড়িয়ে পড়তে পারে, তা স্বীকার করে নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। রাজ্য প্রশাসন বলেছে, ‘মিথ্যা গুজবের ফলে জীবনহানি, সম্পত্তির ক্ষতি এবং জনসাধারণের শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রবল ব্যাঘাত ঘটার একটি আসন্ন বিপদ রয়েছে।’ এ কারণে ইন্টারনেট পরিষেবা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে মণিপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মণিপুরে অনুপজাতি (উপজাতি শ্রেণিভুক্ত নয়, এমন সম্প্রদায়) মেইতেই সম্প্রদায়কে উপজাতি শ্রেণিভুক্ত করার হাইকোর্টের সুপারিশের প্রতিবাদে ৩ মে সেখানে সহিংসতা শুরু হয়। তিন দিনের সহিংসতায় ৭০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান, অসংখ্য মানুষ আহত হন এবং হাজার হাজার স্থানীয় বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হন। প্রায় ৩০০ গির্জা এবং গির্জা–সংলগ্ন অফিস ক্ষতিগ্রস্ত বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়। তিন সপ্তাহ হয়ে গেলেও সহিংসতা থামেনি। প্রধানত সংখ্যাগরিষ্ঠ ও হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত মেইতেইদের সঙ্গে কুকিসহ অন্যান্য উপজাতির বিরোধের কারণেই এ ঘটনা ঘটে।
তবে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বিরেন সিং রোববার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো লড়াই হয়নি এবং হওয়া উচিতও নয়। তবে একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করে নেন, সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যখনই সরকার কিছু করার চেষ্টা করবে, তখনই প্রতিরোধ এবং গ্রহণযোগ্যতা উভয়ই তৈরি হবে। তবে এই ঘটনা এখন অতীত। সবকিছু ভুলে গিয়ে আমাদের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।’ তিনি এ কথার বলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবার নতুন করে সহিংসতা শুরু হলো মণিপুরে।
ইম্ফল থেকে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নারী পরিচালক টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনা পুরোপুরি জাতিগত দাঙ্গায় রূপ নিয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের তরফে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ঘর চিহ্নিত করা হয়েছে দরজায় লাল দাগ দিয়ে। বলা হয়েছে, বেআইনি অনুপ্রবেশকারী (মিয়ানমার থেকে আসা) চিহ্নিত করা হচ্ছে। চার্চগুলোকে চিহ্নিত করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৩০৪টি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা পুরোপুরি ‘এথনিক ক্লিনজিং’–এর চেহারা নিয়েছে। এই হিংসা থামাতে মানুষের মনে যে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা দরকার, তা করতে দীর্ঘ সময় লাগবে।’