ভারতে ‘এক দেশ এক ভোট’ মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেল
ভারতজুড়ে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট একই সঙ্গে করানোর প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেল। আজ বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘এক দেশ এক ভোট’ প্রস্তাবটি পাস হয়। মন্ত্রিসভা সূত্রের খবর, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই এই প্রস্তাব বিল আকারে পেশ করা হবে।
এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশের উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখা ও অর্থ অপচয় ঠেকাতে লোকসভা, বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ও পৌরসভা-পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় প্রশাসনের ভোট একই সঙ্গে করা উচিত। প্রস্তাব অনুযায়ী, ১০০ দিনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এই ভোট হয়ে গেলে ভারতের মতো গণতন্ত্রের দেশের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে। উন্নয়নের কাজও ব্যাহত হবে না।
বিজেপি অনেক বছর ধরেই ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি গ্রহণের পক্ষে মত দিয়ে আসছে। নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই চিন্তা বেগবান হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে এক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়। গত মার্চে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে কমিটি তার রিপোর্ট পেশ করে। রিপোর্টে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি, আইনজীবী, নির্বাচন কমিশন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের অভিমত নেওয়া হয়েছে।
তবে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসসহ ১৫টি রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি চালু করতে গেলে আগে সংবিধান সংশোধন করা প্রয়োজন। সে জন্য দরকার বিলের পক্ষে দুই–তৃতীয়াংশের সমর্থন। সেই সমর্থন বিজেপি ও তার সহযোগীদের নেই। সংবিধানের সংশোধন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত বিধানসভাতে পাস করানোও বাধ্যতামূলক।
এটা ঠিক, একই সঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভার ভোট গ্রহণ হলে খরচ অনেক কমে যায়। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার সময় থেকে ভোটপর্ব শেষ হওয়া পর্যন্ত সরকার কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ফলে উন্নয়নমূলক কাজ ব্যাহত হয়। সময় ও অর্থের এই অপচয় রোধ করা যায় একই সঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভার ভোট গ্রহণ হলে। কমিটির প্রস্তাব, সেই সঙ্গে পৌরসভা ও পঞ্চায়েতের ভোটও সেরে ফেলা যেতে পারে। দেশের সর্বত্র ভোট গ্রহণ ১০০ দিনের মধ্যে করে ফেললে গণতন্ত্র বিকশিত হবে বলে কমিটির ধারণা।
কিন্তু মেয়াদ শেষের আগে সরকারের পতন ঘটলে কী হবে? এই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠতে বাধ্য। লোকসভা ও বিধানসভার মেয়াদ পাঁচ বছরের। কোনো কারণে সরকারের পতন ঘটলে দেশ বা রাজ্য কীভাবে চলবে, সেই বিধান নিয়ে বিতর্ক আছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর বিলে কী প্রস্তাব রাখা হয়, তা আগ্রহের জন্ম দিতে বাধ্য। সবচেয়ে বড় আগ্রহ, সংসদে দুই–তৃতীয়াংশের সমর্থন বিজেপি কীভাবে জোটায় তা নিয়ে।
কংগ্রেস এই প্রস্তাবের বিরোধিতা বরাবর করে আসছে। আজ হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, এই প্রস্তাব মোটেই কার্যকর নয়। সরকার এটা করছে বিভিন্ন বিষয় থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে। ‘এক দেশ এক ভোট’ নীতি দেশবাসী মেনে নেবে না। রূপায়ণ করাও সম্ভবপর নয়।