কেন্দ্রীয় সরকারে ৩০ লাখ শূন্য পদে চাকরি দেবে কংগ্রেস

নয়াদিল্লিতে এআইসিসির প্রধান কার্যালয়ে লোকসভা নির্বাচনের ইশেতহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সোনিয়া গান্ধীসহ দলের অন্য নেতারা। আজ ৫ এপ্রিলছবি: এএনআই

কংগ্রেসের চোখে মোদি সরকারের ব্যর্থতার খতিয়ানের প্রথম সারিতে রয়েছে বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধি। সেই সঙ্গে কংগ্রেস মনে করে, সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রতি সরকারের অনীহা তীব্র। লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহারে এসব সমস্যার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।

আজ শুক্রবার প্রকাশিত সেই ইশতেহারে কংগ্রেস জানিয়েছে, ক্ষমতায় এলে কেন্দ্রীয় সরকারের ৩০ লাখ শূন্য পদ তারা পূরণ করবে। একই সঙ্গে আগামী বছর থেকেই এই চাকরির ৫০ শতাংশ নারীদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে।

কংগ্রেস বলেছে, ক্ষমতায় এলে তারা কৃষকদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করবে। স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ মেনে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যকে আইনি স্বীকৃতি দেবে। ন্যূনতম দৈনিক শ্রমের মূল্য ধার্য করা হবে ৪০০ রুপি।

নির্বাচনী ইশতেহারকে কংগ্রেস এবার বলছে ‘ন্যায়পত্র’। ভারত জোড়ো যাত্রা চলাকালে রাহুল গান্ধী দেশে ন্যায় প্রতিষ্ঠার কথা বারবার বলেছেন। সেই ন্যায় হচ্ছে নারীদের, তরুণদের, কৃষকদের, শ্রমিকদের ও ভাগীদারির। ভাগীদারির অর্থ জনসংখ্যার অনুপাত অনুসারে ক্ষমতায় অংশগ্রহণ। তা নিশ্চিত করতে কংগ্রেস জাতগণনার প্রতিশ্রুতি শুনিয়েছিল। এবার ‘ন্যায়পত্রে’ তা নিশ্চিত করতে বলেছে, ক্ষমতাসীন হলে সারা দেশে জাতগণনা করা হবে। সেই সঙ্গে সংবিধান সংশোধন করে প্রান্তিক মানুষের জন্য সংরক্ষণের সীমা ৫০ শতাংশ থেকে বাড়ানো হবে।

কংগ্রেস অফিসে এই ‘ন্যায়পত্র’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী এবং ইশতেহার কমিটির চেয়ারম্যান পি চিদাম্বরম। কংগ্রেস জানায়, ‘ন্যায়পত্র’ ইংরেজি বর্ণমালার তিনটি ডব্লিউয়ের ওপর নির্ভর করে গড়ে তোলা হয়েছে। ‘ওয়ার্ক’ অর্থাৎ সবার হাতে কাজ দেওয়া, ‘ওয়েলথ’ অর্থাৎ দেশের সম্পদ সৃষ্টি করা, যাতে সেই সম্পদ সবার কাছে সমানভাবে বণ্টন করা যায় এবং ‘ওয়েলফেয়ার’ বা কল্যাণ। সেই কল্যাণ বিশেষ করে গরিবদের কথা ভেবে।

‘ন্যায়পত্রে’ দারিদ্র্য দূরীকরণের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। চিদাম্বরম বলেন, ১০ বছর ধরে নরেন্দ্র মোদির সরকার দেশের ১ শতাংশ ধনীর দিকে চেয়ে এসেছে, যার ফলে বঞ্চিত হয়েছেন শেষ ৫০ শতাংশ জনগণ। দেশের ২৩ কোটি মানুষ তাই আজও হতদরিদ্র। আগামী ১০ বছরে এসব মানুষের দারিদ্র্য দূর করবে কংগ্রেস। সেই লক্ষে কংগ্রেস চালু করবে ‘মহালক্ষ্মী’ প্রকল্প। এই প্রকল্পে প্রতিটি দরিদ্র পরিবারের জ্যেষ্ঠ নারীর নামে বছরে এক লাখ টাকা শর্তহীন ঋণ দেওয়া হবে। দরিদ্রদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিতে ২৫ লাখ রুপির বিমা প্রকল্প চালুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস এই প্রকল্প রাজস্থানে চালু করেছিল।

সেনাবাহিনীতে স্থায়ী চাকরি বন্ধ করে মোদি সরকার চালু করেছে ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প। কংগ্রেস জানিয়েছে, ক্ষমতায় এলে ওই প্রকল্প তারা বাতিল করে দেবে। আর বলেছে, জম্মু-কাশ্মীরকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা।

‘ন্যায়পত্রে’ বলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার আছে নিজের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক পরার, খাবার খাওয়ার, ভাষা প্রয়োগের ও ব্যক্তিগত আইন মেনে চলার। কংগ্রেস ব্যক্তিগত আইনে সংস্কার আনার পক্ষে। তবে তা সেই সমাজের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের সম্মতি সাপেক্ষেই হওয়া দরকার। জবরদস্তি নয়। কংগ্রেস বলেছে, আলোচনার ভিত্তিতে তারা সমকামিতাকে স্বীকৃতি দিতে আইন আনবে।

বর্তমানে বয়স্ক নাগরিক, বিধবা নারী ও বিশেষভাবে সক্ষম মানুষের পেনশন তহবিলে সরকার প্রতি মাসে ২০০ থেকে ৫০০ রুপি সহায়তা দেয়। এই অঙ্ক বাড়িয়ে তারা মাসিক এক হাজার রুপি করবে।

ভারতে লোকসভা ও বিধানসভার সব ভোট হয় ইভিএমে। এই মেশিনে কারচুপির অভিযোগ নতুন নয়। নানা মানুষ নানা সময়ে মেশিন নিয়ে সন্দেহ ও সংশয় প্রকাশ করে। কংগ্রেস বলেছে, ক্ষমতায় এলে তারা নির্বাচনী আইন পরিবর্তন করে ইভিএম–সংক্রান্ত সন্দেহ দূর করবে। ভোটিং পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা আনবে। ইভিএম মারফত ভোট দেওয়ার পর ‘ভিভিপ্যাট’ যন্ত্রে তা নিশ্চিত করা হবে। এই ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে ভোটারের ভোট ঠিক জায়গায় পড়েছে কি না।

কংগ্রেস জানিয়েছে, ক্ষমতায় এলে তারা সংবিধানের দশম তফসিলে সংশোধন আনবে। সংশোধনীতে বলা হবে, লোকসভা বা বিধানসভায় নির্বাচিত কেউ দলত্যাগ করলে তাঁর সদস্যপদও সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে। ‘ফেক নিউজ’ও ‘পেইড নিউজ’-এর মোকাবিলায় ১৯৭৮ সালের প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া আইন সংশোধন করে কাউন্সিলকেই ক্ষমতা দেওয়া হবে।

২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে চীনের সঙ্গে লড়াইয়ের পর ভারতের সেনারা যে জমিতে টহলদারির অধিকার হারিয়েছে, তা আবার ফিরে পাওয়া নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি কংগ্রেস দিয়েছে। চীনা নীতিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হবে বলে জানিয়ে বলেছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) প্রকৃত স্থিতাবস্থা ফেরত আনা হবে। মালদ্বীপের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্কও স্বাভাবিক করে তোলা হবে।