মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে আগামীকাল ভোট, মেঘালয়ে চাপে বিজেপি
আগামীকাল সোমবার উত্তর-পূর্ব ভারতের দুই রাজ্য মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে বিধানসভা নির্বাচন। এই নিয়ে চলতি মাসে ভারতের তিনটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে শুধু ত্রিপুরায় নির্বাচনের ফল নিয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপি বেশ অস্বস্তিতে আছে। কিন্তু নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়ে বিজেপি কম আসন পেলেও সরকারে থাকবে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। তবে মেঘালয়ে তারা কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু সেখানে তৃণমূল কংগ্রস নির্বাচনে অংশ নিলে সেটা বিজেপিকে সুবিধা করে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নাগাল্যান্ডের নির্বাচন
নাগাল্যান্ডে ক্ষমতাসীন দলের মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিওর ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (এনডিপিপি) সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন লড়ছে বিজেপি। এনডিপিপি লড়ছে ৪০টি আসনে, বিজেপি ২০টিতে। নাগাল্যান্ডে বিশ্বাসযোগ্য বিরোধী দল না থাকায়, এনডিপিপি-বিজেপি জোটই নির্বাচনে জিতবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
২০১৮ সালে সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েও সরকার গড়তে পারেনি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল নাগা পিপলস ফ্রন্ট (এনপিএফ)। এরপর ২০২১ সালে তারা বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সে যোগ দেয়। অর্থাৎ প্রধান বিরোধী দল (এনপিএফ) কার্যত মিশে যায় এনডিপিপি-বিজেপি জোটে। এখন বিধানসভা নির্বাচনে এককভাবে লড়লেও ফলাফল ঘোষণার পরে এনপিএফ আবারও সরকারে চলে যেতে পারে।
এই কারণে ক্ষমতাসীন জোট ও বিরোধী জোটের কার্যত খুব একটা ফারাক নেই নাগাল্যান্ডে; বরং নাগাল্যান্ডের প্রকৃত বিরোধী দল সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী সাবেক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনএসসিএন-আইএম (ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড-আইজাক মুইভা)। নির্বাচনে যে দলই সরকারে আসুক না কেন, এনএসসিএন-আইএমের সঙ্গে নাগা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তাদের নতুন করে আলোচনায় বসতে হবে। কারণ, কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর যে আলোচনা চলছিল, তা ভেস্তে গেছে। সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী নেইফিউ রিওর নেতৃত্বে আবার নতুন করে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে নাগাল্যান্ডের সব পক্ষকেই। নির্বাচনে ইস্যু না হলেও এটা নাগাল্যান্ডের সম্ভবত সবচেয়ে বড় ইস্যু।
ইতিমধ্যে নাগাল্যান্ডে আরও একটি আন্দোলন শুরু হয়েছে। পূর্ব নাগাল্যান্ডের সাতটি উপজাতি গোষ্ঠী ইস্টার্ন নাগাল্যান্ড পিপলস অর্গানাইজেশন (ইএনপিও) নামে একটি নতুন সংগঠন গঠন করেছে। পূর্ব নাগাল্যান্ডে একটি নতুন রাজ্য ‘ফ্রন্টিয়ার নাগাল্যান্ড’ গঠনের দাবি তুলেছে তারা। এই নির্বাচনের পর সেই দাবি আরও জোরালো হবে। নতুন সরকারকে বিষয়টি নিয়ে অনেকটা সময় ব্যয় করতে হবে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
মেঘালয় নির্বাচন
নাগাল্যান্ডে স্বস্তিতে থাকলেও মেঘালয়ে পুরোপুরি স্বস্তিতে নেই বিজেপি। মেঘালয় প্রধান ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) বিজেপিসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে মিলে ২০১৮ সাল থেকে সেখানে সরকার চালিয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে এনপিপি ও বিজেপি নাগাল্যান্ডের মতো আসন সমঝোতা করেনি; বরং তারা পৃথকভাবে লড়ছে। এনপিপি আশা করছে, তারা এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে।
ট্রেভর কিং নামে মেঘালয়ের এক স্থানীয় নেতা প্রথম আলোকে বলেন, একাধিক প্রশ্ন নির্বাচনে সামনে নিয়ে আসতে পেরেছেন, যার উত্তর বিজেপির কাছে নেই। সেই ইস্যুর ভিত্তিতে তাঁরা নির্বাচন জিততে পারবেন বলে আশা করছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকত্ব আইন সিএএ (সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট)। এই আইন স্থানীয় উপজাতির স্বার্থের বিরোধী, এই প্রচার এনপিপি চালিয়েছে। এনপিপি নেতাদের দাবি, ইস্যুটি সাধারণ মানুষ গ্রহণ করেছেন।
এ ছাড়া বিজেপি স্থানীয় রাজনৈতিক দলের দাবি মেনে ‘ইনার লাইন পারমিট’ মেঘালয়ে চালু করেনি, সে প্রশ্নও তুলেছে এনপিপি। এই অনুমতিপত্র (ইনার লাইন পারমিট) কার্যত একটি অভ্যন্তরীণ ভিসার মতো, যা নির্দিষ্ট রাজ্যে প্রবেশের জন্য রাজ্য সরকার ভারতের বা ভারতের বাইরে থেকে আসা নাগরিকদের দেয়। উত্তর–পূর্ব ভারতের অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও মণিপুর এই আইন চালু আছে। এ ছাড়া দক্ষিণ ভারতে লাক্ষাদ্বীপেই এই নিয়ম অনুসরণ করা হয়।
মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে অবস্থিত নর্থ ইস্ট হিল ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রনেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিলং ও সংলগ্ন জেলায় ঘুরলেই দেখা যাচ্ছে, বিজেপির নেতা–নেত্রীদের ছবি মুছে দেওয়া হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর বড় “কাট আউট”ও বিকৃত করা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন জোটের কর্মীরাই এই কাজ করেছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাতে বাধা দেননি। এই অবস্থা থেকে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে এখানে বিজেপির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।’ ওই ছাত্রনেতা আরও বলেন, মেঘালয় নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস না থাকলে এখনই বলে দেওয়া যেত যে বিজেপি হারছে।
তৃণমূল কংগ্রেস মেঘালয়ের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সেখানে ভালো রকম সময় দেওয়ায় একটা স্থানীয় নেতৃত্ব দাঁড় করাতে পেরেছে তারা। ২০২১ সালে মেঘালয়ের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা ১১ জন কংগ্রেস এমএলএসহ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। প্রধানত সাংমার যোগদানের কারণেই তৃণমূল মেঘালয়ে (ত্রিপুরার তুলনায়) অপেক্ষাকৃত ভালো ফল করতে পারে।
তবে তৃণমূলের সমালোচকদের বক্তব্য, তৃণমূল অপর ধর্মনিরপেক্ষ দল এনপিপির ভোট কেটে বিজেপির জেতার রাস্তা প্রশস্ত করতেই মেঘালয়ে লড়তে গেছে। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
মেঘালয়ের মোট ৬০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৫৯টিতে ও নাগাল্যান্ডে ৬০ সদস্যের বিধানসভার সব কটি আসনেই কাল নির্বাচন হবে। মেঘালয়ে প্রায় ২২ লাখ ভোটারের মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। অন্যদিকে নাগাল্যান্ডে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৩ লাখ ১৭ হাজার ৬৩৪। এই দুই রাজ্য ও ত্রিপুরার ভোট গণনার ফলাফল আগামী ২ মার্চ একসঙ্গে প্রকাশ করা হবে।
এই তিন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পর উত্তর-পূর্ব ভারতে অন্তত দুটি নতুন রাজ্য গঠনের দাবির মুখোমুখি হতে হবে নতুন সরকারকে। এই দুই প্রস্তাবিত রাজ্য হলো ত্রিপুরায় বৃহত্তর তিপরাল্যান্ড ও ফ্রন্টিয়ার বা সীমান্ত নাগাল্যান্ড।