ভাঙনের মুখে ভারতের ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা
বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঝাড়খন্ডের শাসক দল ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) ভাঙতে চলেছে। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও দলের প্রবীন নেতা চম্পাই সরেন গতকাল রোববার দিল্লি এসেছেন। সঙ্গে এসেছেন তাঁর ছয় অনুগামী। রাজধানী আসার পথে কলকাতায় তিনি কথা বলেছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে। জোর জল্পনা, ভোটের আগেই জেএমএম ছেড়ে তিনি বিজেপির হাত ধরতে চলেছেন।
ঝাড়খন্ড বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। হরিয়ানা ও জম্মু–কাশ্মীরের ভোটের দিন ঘোষণা হলেও নির্বাচন কমিশন মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খন্ডের নির্বাচনের তফসিল এখনো ঘোষণা করেনি। অথচ চার বিধানসভার মেয়াদ কাছাকাছি সময়ে উত্তীর্ণ হচ্ছে।
সম্ভাব্য দলত্যাগের আগে চম্পাই সরেনকে স্বাগত জানিয়েছেন বিজেপির সহযোগী হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চার (হাম) নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝি। গতকালই তিনি এক্স হ্যান্ডেলে চম্পাই সরেনকে ‘বাঘ’ সম্বোধন করে লেখেন, ‘চম্পাইদা, আপনি বাঘ ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। এনডিএ পরিবারে আপনাকে স্বাগত।’
দিল্লিযাত্রার সময়েই চম্পাইয়ের দলত্যাগ নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে ওঠে; যদিও তিনি তা অস্বীকার করেছিলেন। কিন্তু দিল্লি পৌঁছনোর পর চম্পাই সরেন নিজেই সেই জল্পনায় ধুনো দেন। এক্সে এক দীর্ঘ পোস্টে দলে ‘অসম্মানিত, অপমানিত ও লাঞ্ছিত’ হওয়ার বিষয় উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘আমার সামনে বিকল্প এখন তিনটি। রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস গ্রহণ, নতুন দল গঠন করা কিংবা চলার পথে নতুন সঙ্গী পেলে তার হাত ধরে বাকি পথ হাঁটা।’ তিনি আরও লেখেন, বিধানসভা ভোট পর্যন্ত তিন বিকল্পই তাঁর কাছে খোলা থাকছে।
রাজনৈতিক মহল এই বার্তার একটাই অর্থ করছে, বিজেপির সঙ্গী হয়ে চম্পাই সরেন বিধানসভার ভোট লড়তে চলেছেন। একটি বিষয় অস্পষ্টই থাকছে, নিজের দল গড়ে তিনি বিজেপির জোটসঙ্গী হবেন, নাকি বিজেপিতে যোগ দিয়ে জেএমএম–আরজেডি–কংগ্রেসের মোকাবিলা করবেন।
চম্পাই সরেনের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনের মনোমালিন্য আচমকাই। হেমন্তের বাবা শিবু সরেনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চম্পাই দল গড়ে তুলেছিলেন। শিবুর উত্তরাধিকারী হিসেবে হেমন্তকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি মেনেও নিয়েছিলেন। জমি নিয়ে মামলায় আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) হেমন্তকে গ্রেপ্তার করে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। গ্রেপ্তারের ঠিক আগে তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে যান চম্পাইকে। গত জুন মাসে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফিরে আসার পর প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল, হেমন্ত ভোট পর্যন্ত চম্পাইকেই মুখ্যমন্ত্রী রাখবেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রিত্ব ফিরে পেতে আগ্রহী হওয়ায় জুলাই মাসে চম্পাইকে সরে যেতে হয়। সেটাই চম্পাইয়ের কাছে ‘অসম্মান, অপমান ও লাঞ্ছনা’।
লোকসভা ভোটে কিছুটা কোণঠাসা বিজেপির কাছে এই সুযোগ খানিকটা পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনার মতো। ২০১৯ সালের ভোটে ৮১ আসনবিশিষ্ট বিধানসভায় জেএমএম জিতেছিল ৩০টি, কংগ্রেস ১৬ ও আরজেডি ১টি। জোটের মোট আসন ছিল ৪৭। বিজেপি জিতেছিল ২৫ আসন।