ইরানের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি ততটা গুরুত্ব দিচ্ছে না ভারত
ইরানের চাবাহার সমুদ্রবন্দর পরিচালনায় গত সোমবার দেশটির সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি করেছে ভারত। চুক্তি হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় যুক্তরাষ্ট্র এ নিয়ে হুঁশিয়ার করে বলেছে, ইরানের সঙ্গে কোনো প্রতিষ্ঠান বা দেশ ব্যবসায়িক চুক্তি করলে সেই দেশ ওয়াশিংটনের ‘সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার’ মুখে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন হুঁশিয়ারির জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ওয়াশিংটনকে বোঝাতে হবে যে এ চুক্তি সবার জন্য লাভজনক। যথাযথভাবে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তাদের কাছে স্পষ্ট হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে জয়শঙ্কর বলেন, এটা যোগাযোগ ও তাদের বোঝানোর বিষয়। ওয়াশিংটনের কর্মকর্তাদের বোঝাতে হবে যে সবার লাভের কথা বিবেচনা করেই এ চুক্তি করা হয়েছে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চাবাহার সমুদ্রবন্দর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অতীতের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ইতিবাচক। একসময় ওয়াশিংটন মনে করত, দীর্ঘ মেয়াদে চাবাহার বন্দরের প্রাসঙ্গিকতা আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা যখন আফগানিস্তানে তখন কিছুটা দ্বিধা সত্ত্বেও এই প্রকল্পে সম্মতি ছিল ওয়াশিংটনের। এর একটা বড় কারণ ছিল আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা রাখার বিষয়ে নয়াদিল্লিকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার মনে করত ওয়াশিংটন। ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সেই একই প্রকল্প নিয়ে ভারত চুক্তি করায় এখন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখনো বেশ উষ্ণ। কিন্তু ইরানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অত্যন্ত বৈরী। ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে হামাসকে সমর্থন দেওয়ায় তেহরানের প্রতি ওয়াশিংটনের মনোভাব আরও কঠোর হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চাবাহার সমুদ্রবন্দর পরিচালনার বিষয়ে ইরানের সঙ্গে ১০ বছরের চুক্তির ঘোষণা দেয় ভারত।
চুক্তির কয়েক ঘণ্টা পর মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ–মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এখনো কার্যকর। এসব নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করা হবে। যারা ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি করার কথা ভাবছে, তাদের সম্ভাব্য মার্কিন ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
পাকিস্তানের পশ্চিম সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে চাবাহার বন্দরের অবস্থান। বন্দরটি নিয়ে ২০১৬ সালে ইরানের সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি করে ভারত। অন্যদিকে পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দর নির্মিত হচ্ছে চীনের অর্থায়নে। তাই কৌশলগত কারণে চাবাহার বন্দর ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।