আসামে কেন হারলেন তিনবারের সংসদ সদস্য আতর ব্যবসায়ী আজমল
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের ভোটের ফলাফল থেকে স্পষ্ট, রাজ্যের প্রায় ৩৫ শতাংশ মুসলমান ভোটের বড় অংশ এবার মুসলমান প্রধান দল অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টে (এআইইউডিএফ) পড়েনি। বরং এই ভোট সরে কংগ্রেসে গেছে। ফলে কংগ্রেসের ভোট আসামে বিজেপির চেয়ে বেড়ে গেছে। তবে আসনসংখ্যায় তারা বিজেপির চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে।
আসামে বিজেপি পেয়েছে নয়টি আসন এবং ৩৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস তিনটি আসন পেয়েছে। ভোট পেয়েছে ৩৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর এআইইউডিএফ একটিও আসন পায়নি। তাদের ভোট গতবারের ৭ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে ৩ দশমিক ১৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা, এআইইউডিএফ প্রধান মাওলানা বদরুদ্দীন আজমল ১০ লাখের বেশি ভোটে পশ্চিম আসামের ধুবড়ি আসনে হেরেছেন কংগ্রেস প্রার্থী রকিবুল হুসেনের কাছে। ২০০৫ সালে গঠিত হওয়ার পর এআইইউডিএফের উত্তরোত্তর জনসমর্থন বাড়ছিল। ২০০৯ সালে একটি আসন পাওয়ার পরে ২০১৪ সালে তারা পায় তিনটি আসন এবং প্রায় ১৫ শতাংশ ভোট।
২০১৯ থেকে আজমলের দলের ফল খারাপ হতে শুরু করে। তারা পায় একটি আসন এবং প্রায় ৮ শতাংশ ভোট। সেখান থেকে এবার তারা নেমে এসেছে ৩ শতাংশে। একটিও আসন পায়নি। অর্থাৎ তাদের ভোট কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। স্পষ্টতই আসামের বাঙালি মুসলমানের একটা বড় অংশ বাঙালি মুসলমানের দল এআইইউডিএফকে ভোট দেয়নি, দিয়েছে কংগ্রেসকে। আর এই কারণেই কংগ্রেসের ভোট বেড়ে গেছে প্রায় ২ শতাংশ।
নির্বাচনে হারের পর আজমল গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এটা আমাদের জন্য একটা বড় ধাক্কা। আমরা বিষয়টি বিশ্লেষণ করব। দেখার চেষ্টা করব, কোথায় আমাদের ভুল হয়েছে। কারণ, এই আসন (ধুবড়ি) থেকে মানুষ আমায় তিনবার লোকসভায় পাঠিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, বিশ্লেষণ করে পরের নির্বাচনে আমরা ভালো ফল করব।’
বাঙালি মুসলমান সমাজের জনপ্রিয় নেতা আজমল ভারতসহ গোটা বিশ্বের বিত্তবান মুসলমানদের একজন। তাঁর প্রধান ব্যবসা আতরের। মুসলমান সমাজের কল্যাণমূলক কাজেও তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন।
গোয়াহাটি থেকে এআইইউডিএফের এক নেতা প্রথম আলোকে টেলিফোনে বলেন, ‘আজমলের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার ঘনিষ্ঠ। নানা সময় এমন ঘটনা ঘটেছে, বিশেষ করে কিছু ক্ষেত্রে সরকারি লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে, যা থেকে মনে হয়েছে আসাম সরকারের কাছ থেকে তিনি নানা সুবিধা পাচ্ছেন। এর নেতিবাচক প্রভাব নির্বাচনে পড়েছে।’
আসামে মোটামুটি বিষয়টি প্রকাশ্যে আলোচিত হয়, বাঙালি মুসলমানের হয়ে কথা বলা বদরুদ্দীন আজমলের দল থাকার ফলে বিজেপির অনেক সুবিধা হয়েছে। বাঙালি মুসলমানদের ভোট যা আগে পুরোপুরি কংগ্রেসে যেত, তার একটা বড় অংশ এখন যায় এআইইউডিএফে। এই ভোট ভাগের কারণে বারবার হেরে যায় কংগ্রেস। যদিও এই বক্তব্যের বিরুদ্ধ মতও আছে।
তবে ১০ বছর পর এই প্রথম আবার বিজেপির চেয়ে কংগ্রেসের ভোট বেড়ে যাওয়ায় চিন্তায় থাকবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত। তিনি এবারের নির্বাচনেও সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের পথে হেঁটেছেন। তাঁর ভাষণ ছিল অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক। ২০২৪ সালে বিজেপি আসামে গতবারের ফল ধরে রাখতে পারলেও ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাঙালি মুসলমানেরা যদি আবার ঢেলে কংগ্রেসকে ভোট দেন, তবে বিপদে পড়বে বিজেপি।
আসামের বিষয়ে খোঁজ রাখেন এমন বিশ্লেষকদের মতে, ভবিষ্যতে এই ঘটনা ঘটতে পারে, সেটা আঁচ করেই হিমন্ত জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্বাচনী কেন্দ্র ভাগ করার যে প্রক্রিয়া (ডিলিমিটেশন), আসামে তা দ্রুত শেষ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।