২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ভারতে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা

আরজি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিক্ষোভ। গতকাল ভারতের মুম্বাইয়েছবি : রয়টার্স

কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি শেষ হলেও কাজে যোগ দেননি অনেক চিকিৎসক। এ ঘটনার বিচার দাবিতে তাঁরা ১০ দিন ধরে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন স্তরের সাধারণ জনগণও। গত শনিবার দেশজুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসকেরা। গতকাল রোববারও এ ঘটনার বিচার দাবিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিক্ষোভ চালিয়ে যান জুনিয়র চিকিৎসকেরা। এর ফলে ভারতের স্বাস্থ্যসেবা খাতের ওপর এর প্রভাব পড়েছে।

গতকাল সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখা বন্ধ করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। এ সময় জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা কেবল জরুরি সেবা দেওয়ার কাজ চালিয়েছেন। একজন চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্যসেবা খাতের ক্ষতি করতে চাই না। আমাদের বিক্ষোভে রোগীদের যে সমস্যা হচ্ছে, তা আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু একজন কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করার প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রতিবাদ খুবই প্রাসঙ্গিক। কাজে আসার সময় কি আমরা এটাই আশা করি? আমাদের বোনের বিচার না হওয়া পর্যন্ত এবং সরকার আমাদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত আমরা আমাদের প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।’

৯ আগস্ট ভোরে আর জি কর হাসপাতালের চারতলায় এ ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দায়িত্ব পালন শেষে সেমিনার রুমে বিশ্রাম নেওয়ার সময় ওই চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। এর পর থেকেই চিকিৎসকদের বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি

চলছে। অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পরের দিন একজন স্বেচ্ছাসেবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। চিকিৎসকেরা দ্রুত অপরাধীদের শাস্তি দাবির পাশাপাশি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি করছেন।

কলকাতা হাইকোর্ট ১৩ আগস্ট এ ঘটনার মামলার তদন্তভার কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে তদন্ত সংস্থা সিবিআইকে দিয়েছে। ১৪ আগস্ট থেকে সিবিআই তদন্ত শুরু করেছে।

ভারতীয় মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ডাকা কর্মবিরতি গতকাল সকাল ছয়টায় শেষ হয়। মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বলা হয়, দেশের ৬০ শতাংশ চিকিৎসক নারী। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা চিঠিতে বলা হয়, হাসপাতালের কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে তাঁর হস্তক্ষেপ করা উচিত। সব স্বাস্থ্যসেবাকর্মী শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ পাওয়ার দাবি রাখেন।

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের কাজে ফেরার আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি উন্নত করতে একটি কমিটি তৈরির কথা বলা হয়েছে।

কলকাতা প্রতিনিধি জানান, গতকাল কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার গত শনিবার থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য আর জি করসহ পাশের বেলগাছিয়া ও শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড় এলাকায় জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বলা হয়েছে, ওই এলাকায় পাঁচজন বা তার বেশি মানুষের জমায়েত করা যাবে না।

সিবিআই এ ঘটনার তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদ করছে হাসপাতালের সদ্য পদত্যাগী অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। গত শুক্রবার বেলা তিনটা থেকে তাঁকে সিবিআই দপ্তরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

শনিবার বিজেপি নেতা ও রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন, ধর্ষণ ও হত্যার শিকার ওই নারী চিকিৎসকের ভিসেরা বদল করা হয়েছে প্রমাণ লোপাটের জন্য। যদিও লালবাজার পুলিশ হেডকোয়ার্টার বলছে, ভিসেরা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্যাকিং, সিল বা লেবেল লাগানোর কাজ পুলিশ করে না। সুতরাং এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।

তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র শান্তনু সেনকে আর জি করের ঘটনার পরে রাজ্যের তৃণমূলের মুখপাত্রের পদ থেকে সরানোর পর গতকাল তাঁকে কলকাতার পৌরসভার উপদেষ্টার পদ থেকেও সরানো হয়েছে।

আরেক মুখপাত্র কুনাল ঘোষ আর জি কর হাসপাতালের নারী চিকিৎসক হত্যাকাণ্ড নিয়ে তৃণমূলের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলের মেরামত শুরু হলো কেন? ভাঙা হলো কেন সেমিনার হল? এতে করে তো ভুল বার্তা যাবে মানুষের কাছে। তিনি আরও বলেছেন, ‘আমাদের কিছু ভুল শুধরে সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে ওদের চক্রান্ত ভাঙতে হবে।’