শামিকে মোদির জড়িয়ে ধরা নিয়ে যে আলোচনা চলছে
আলোচনাটা শুরু হয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পর। সেই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ভারত। সেমিফাইনালে ভারতের জয়ে বড় অবদান ছিল পেসার মোহাম্মদ শামির। ভারতের জয়ের পর দলকে অভিনন্দন জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
নরেন্দ্র মোদি এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে লেখেন, ‘ব্যক্তিগত কিছু পারফরম্যান্সের কারণে আজকের সেমিফাইনাল আরও বেশি বিশেষ হয়ে উঠেছে। এই ম্যাচ ও এবার বিশ্বকাপে মোহাম্মদ শামির বোলিং কয়েক প্রজন্ম ধরে ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে রাখবেন। অনেক ভালো খেলেছেন শামি।’
মোহাম্মদ শামির দুর্দান্ত বোলিংয়ের পাশাপাশি ওই ম্যাচে ভারতীয় দুজন ব্যাটসম্যানও শত রান করেন। এর মধ্যে বিরাট কোহলি প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পঞ্চাশতম শতক হাঁকান। এর মধ্য দিয়ে বিরাট কোহলি তাঁরই এক সময়ের সতীর্থ শচীন টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে যান।
সেদিন গোটা ভারত যখন বিরাট কোহলির প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখন নরেন্দ্র মোদি শুধু শামির নাম উল্লেখ করেন তাঁর পোস্টে। এরপরই আলোচনা শুরু হয়। অনেকে প্রশ্ন তোলেন, ‘আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের কথা ভেবেই কি নরেন্দ্র মোদি মুসলিম ভোটার টানতে শামির নাম নিলেন?’
এর চার দিন পর বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় ভারত। তবে পুরো বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলে আসা ভারতকে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো শিরোপা পায় অস্ট্রেলিয়া। জন্মভূমি গুজরাটের আহমেদাবাদে নিজের নামে নির্মিত স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।
পুরো বিশ্বকাপে অপরাজিত ভারত ফাইনাল ম্যাচ হারায় শতকোটি সমর্থকের পাশাপাশি ভেঙে পড়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়েরাও। ফাইনালের পর মর্মাহত ক্রিকেটারদের উৎসাহ দিতে ভারতীয় ক্রিকেট দলের ড্রেসিং রুমে যান মোদি। এর একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
২ মিনিট ৫ সেকেন্ডের ভিডিওর শুরুতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিরাট কোহলির কাঁধে হাত রেখে ড্রেসিং রুমে ঢুকছেন। কথা বলতে বলতে কাছে টেনে নিচ্ছেন দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। এ সময় তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘তোমরা ফাইনালের আগে ১০টি ম্যাচ জিতেছ, যা হয়েছে তা হতেই পারে। আবারও চেষ্টা করো ভাইয়েরা। দেশ তোমাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।’
এরপর নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলান। প্রধানমন্ত্রীকে এ সময় বলতে শোনা যায়, ‘তোমরা অনেক পরিশ্রম করেছ এবং ভালো ফলও করেছ। কিন্তু এ রকম তো হতেই পারে। তোমরা পরস্পরের সঙ্গে কথাবার্তা বলো এবং নিজেদের সঙ্গী-সাথিদের মনোবল অটুট রাখার চেষ্টা করো।’
ভিডিওর ৪০ সেকেন্ডের মাথায় মোহাম্মদ শামিকে নাম ধরে ডাকেন মোদি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি খুবই ভালো করেছ।’ এ কথা বলতে বলতে তিনি শামিকে জড়িয়ে ধরেন। শামির মাথা নিজের বুকে চেপে ধরেন। ডান হাত দিয়ে শামির মাথা নিজের বুকে চেপে ধরে বাঁ হাতে তাঁর পিঠ চাপড়াতে থাকেন। এভাবে প্রায় ১০ সেকেন্ড শামির সঙ্গে সময় কাটাতে দেখা যায় মোদিকে।
এ ঘটনারই একটি ভিডিও আজ মঙ্গলবার সকাল দশটার দিকে এক্সে প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই। প্রকাশের পাঁচ ঘণ্টায় ভিডিও চিত্রটি ২০ লাখের বেশি মানুষ দেখেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সৌজন্যে এই ভিডিও চিত্রটি পাওয়ার কথা জানিয়েছে এএনআই।
শামির প্রতি মোদির এমন ‘দরদ’ নিয়েই ব্যাপক আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
শামির বাড়ি উত্তর প্রদেশে। এটি ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য। সেখানকার মোট ভোটারের প্রায় ২০ শতাংশ মুসলিম। অনেকে বলছেন, মুসলিম ভোটার টানতেই শামির প্রতি মোদির এই ‘দরদ’।
২০২৪ সালে হবে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল হিসেবে পরিচিত নরেন্দ্র মোদির বিজেপি এবারের নির্বাচনে মুসলিম ভোটারদের টানতে নানা চেষ্টা চালাচ্ছে। এ জন্য মুসলিমদের মধ্যেও বিজেপি ও দলটির নেতার বিভাজন তৈরি করতে চান বলেও অভিযোগ আছে।
মুসলিম ভোটারদের সিংহভাগ নিম্ন আয়ের মানুষ। অগ্রসর অংশের দ্বারা নিম্ন আয়ের মুসলিমরা কীভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, বিভিন্ন সভা–সমাবেশে তাই তুলে ধরছেন বিজেপি নেতারা। অনেকে বলছেন, নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান শামির প্রতি মোদির ‘দরদ’ সে কৌশলেরই অংশ।
শামিকে মোদির এভাবে জড়িয়ে ধরার ঘটনায় অনেকে মন্তব্য করছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে কীভাবে মুসলিম ভোট আদায় করা যায়, মোদি সেই চেষ্টায় আছেন। ক্রিকেট নিয়ে ভারতীয়দের আবেগকে প্রভাবিত করতেই জনপ্রিয় একজন সংখ্যালঘু ক্রিকেটার শামিকে নিশানা করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী মোদির শামিকে জড়িয়ে ধরার ঘটনাটিকে কিঞ্চিত ব্যঙ্গ করে এ ঘটনার সঙ্গে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ছবি ‘সোনার কেল্লা’র গোয়েন্দা ফেলুদার ভূমিকায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সহকারী তোপসেকে দেওয়া তাঁর একটি সংলাপ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
একটি নির্দিষ্ট ঘটনার উল্লেখ করে সহচর তোপসের উদ্দেশে ছবিতে ফেলুদা বলেন, ‘চিন্তা হচ্ছে রে তোপসে।’ শামিকে জড়িয়ে ধরার ঘটনার ভিডিও চিত্রের সঙ্গে এ সংলাপ লিখছেন অনেকে। একজন লিখেছেন এভাবে, ‘চিন্তা হচ্ছে রে তোপসে, মুসলিমদের ভোট আর ছেড়ে রাখা যাচ্ছে না।’