ভারতে কৃষকেরা আবার দিল্লিমুখী
দিনকয়েক বিরতির পর আজ বুধবার নতুন উদ্যমে শুরু হয়েছে কৃষকদের দিল্লি অভিযানের তোড়জোড়। পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্ত থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে দিল্লিতে তাঁরা আসতে পারেন কি না, সেটাই দেখার। কৃষকদের রোখা হরিয়ানা ও দিল্লি পুলিশের কাছে চ্যালেঞ্জ। দেখা যাক, সেই চ্যালেঞ্জে কে উতরে যায়।
দিল্লি পুলিশ অভিযান রুখতে সচেষ্ট। দিল্লি সীমান্তের টিকরি, সিংঘু, গাজিপুর ও খানৌরি সীমান্তে নজরদারি ও পাহারা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের ব্যারিকেড ছাড়াও মোতায়েন করা হয়েছে দাঙ্গা রোধ বাহিনী। প্রস্তুত রাখা হয়েছে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল। অন্য দিনের মতো নজরদারি রাখা হচ্ছে ড্রোন দিয়ে। দিল্লি পুলিশ কোনোভাবেই কৃষকদের ট্রাক-ট্রাক্টর নিয়ে দিল্লি সীমান্তে জড়ো হতে দিতে চায় না।
তবে পুলিশের চ্যালেঞ্জ অন্য জায়গায়। আন্দোলনকারী নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, ট্রাক-ট্রাক্টর নিয়েই যে অভিযান করে দিল্লি পৌঁছাতে হবে, তার মানে নেই। কৃষকেরা ট্রেনে-বাসে-হেঁটেও দিল্লির অভ্যন্তরে পৌঁছাতে পারেন। দিল্লি পুলিশকে তাঁদের হুঁশিয়ারি, পারলে কৃষকদের আটকানো হোক।
এই পরিস্থিতিতে দিল্লি পুলিশ আজ সকালে সাধারণ নাগরিকদের বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে। বলেছে, বেশ কিছু রাস্তায় অস্বাভাবিক যানজট হতে পারে। ফলে ভোগান্তির জন্য মানুষকে প্রস্তুত থাকতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় ঢুকে পড়ে কৃষকেরা যাতে জনজীবন ব্যাহত করতে না পারেন, সে জন্য বিভিন্ন ধরনের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মেট্রোস্টেশনগুলো প্রয়োজনে বন্ধ রাখা হবে। ওই সব স্টেশনে ট্রেন যাতে না থামে, সেই বন্দোবস্তও করা হবে। মোটকথা, দিল্লি পুলিশ সব রকমভাবে প্রস্তুত থাকছে।
কৃষি আইন প্রত্যাহার ও ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি বৈধতার দাবিতে ২০২০-২১ সালে সারা ভারতের কৃষক সংগঠন আন্দোলনে শামিল হলেও এবার যোগ দিয়েছে প্রধানত পাঞ্জাবের কয়েকটি সংগঠন। আগেরবারের আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল দেশের ৫০০ সংগঠনের নেতাদের নিয়ে গঠিত সংযুক্ত কিসান মোর্চা (এসকেএম)। সেই সংগঠন থেকে বেরিয়ে এবার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে পাঞ্জাবের কয়েকটি সংগঠন। এসকেএম নেতাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার এই গোষ্ঠীদের সঙ্গে কোনোরকমে একটা বোঝাপড়ায় আসতে উৎসাহী, যাতে প্রচার করা যায় কৃষকদের অসন্তোষ দূর করতে সরকার সক্রিয়।
এসকেএম নেতা হান্নান মোল্লা এই প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এই আন্দোলনের বিরোধিতা করছি না। কারণ, আমরা মনে করি, আন্দোলনের অধিকার সবার আছে। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের বিরোধিতাও আমরা করেছি। কিন্তু আন্দোলনকারীরা যদি সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কোনো সমঝোতায় যাওয়ার চেষ্টা করেন, তা হলে এসকেএম তার বিরোধিতা করবে।’ হান্নান মোল্লা বলেন, ‘ধান ও গমের বদলে ডাল, তুলা বা ভুট্টার চাষ করানো এবং ওই ফসলের জন্য পাঁচ বছর এমএসপি ঠিক করার মতো প্রস্তাব দিয়ে সরকার কৃষক ঐক্য ভাঙতে চেয়েছিল। আমরা তার বিরোধিতা করেছি।
আমাদের বিরোধিতার মুখে পাঞ্জাবের আন্দোলনকারী নেতারাও তা খারিজ করে দিতে বাধ্য হন।’ হান্নান মোল্লা জানান, ২৪টি ফসলের এমএসপির আইনি স্বীকৃতি, সব মামলা প্রত্যাহার, ঋণ মওকুফ, বিদ্যুতের ন্যায্য দাম ঠিক করাসহ যেসব দাবি প্রথম দিন থেকে করে আসা হচ্ছে, সরকারকে সেগুলো পূরণ করতে হবে। স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ মানতে হবে। তা না হওয়া পর্যন্ত কৃষকমন সন্তুষ্ট হবে না।
এসকেএম নেতৃত্ব ১৪ মার্চ দিল্লিতে কৃষকদের মহা পঞ্চায়েতের ডাক দিয়েছে। ১০ মার্চ সারা দেশে চার ঘণ্টার জন্য ‘রেল রোকো’ আন্দোলন করা হবে।
২০২০-২১ সালে আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার এগারোবার বৈঠক করেছিল। তারপর বাধ্য হয়েছিল তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে। কিন্তু অন্য দাবিগুলো এখনো অমীমাংসিত। এবার পাঞ্জাবের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকার ইতিমধ্যেই পাঁচবার আলোচনায় বসেছে। কিন্তু সমাধান সূত্রে পৌঁছানো যায়নি।