গুলাম নবীর সহায়তা নিয়ে কাশ্মীরের ক্ষমতায় যেতে চায় বিজেপি
কংগ্রেস ছাড়ার পর জম্মু–কাশ্মীরের কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ গুলাম নবী আজাদের সঙ্গী হচ্ছে। গত ২ দিনে কাশ্মীরে ৬০ জনের বেশি কংগ্রেস নেতা–কর্মী কংগ্রেস ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও বিধায়কেরাও আছেন। জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী তারা চাঁদ আজ মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সামনে আরও অনেক কংগ্রেস নেতা দল ছাড়বেন। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই গুলাম নবী নতুন সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল গঠন করবেন।
নতুন দল গড়ার অর্থ গুলাম নবী আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। জম্মুর ডোডা জেলার রাজনীতিক হলেও কংগ্রেস নেতা হিসেবে আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান কোনোকালেই পোক্ত ছিল না। সেই কারণে কখনো নিজ রাজ্য থেকে ভোটে দাঁড়ানোর তেমন সাহস পাননি। ১৯৮০ ও ১৯৮৪ সালে লোকসভায় জিতেছিলেন মহারাষ্ট্রের ওয়াসিম কেন্দ্র থেকে। বাকি সময় রাজনীতি করেছেন রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে। রাজ্যসভার সদস্য হিসেবেই ২০০৫ সালে তিনি জম্মু–কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে উপনির্বাচনে জিতেছিলেন। সেই প্রথম ও শেষ। এ ধরনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়ে গুলাম নবী আজাদ জম্মু–কাশ্মীরের রাজনীতিকে কতটা তোলপাড় করতে পারবেন, আপাতত সেই জল্পনাই চলছে।
জনপ্রিয় বিশ্বাস (পিপলস পারসেপশন), গুলাম নবী হলেন জম্মু–কাশ্মীরের জন্য বিজেপির ‘প্ল্যান বি’। কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমে খারাপ হওয়ার সময় থেকেই বিজেপি গুলাম নবীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে থাকে। ২০২১ সালে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে গুলাম নবীর বিদায়ী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেঁদেছিলেন। রাজ্যসভার মেয়াদ শেষ হলেও সরকার তাঁকে দিল্লির সরকারি বাসভবন ছাড়তে বলেনি। এরই মধ্যে চলতি বছর তাঁকে ভারতের তৃতীয় বেসামরিক সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’ পুরস্কার দেওয়া হয়। এসব কারণে এমন একটা ধারণা দানা বেঁধেছে যে গুলাম নবীর দলকে ব্যবহার করে বিজেপি জম্মু–কাশ্মীরের বিরোধী ভোট ভাগাভাগি করবে। যাতে জম্মু অঞ্চলের ওপর নির্ভর করে বিজেপি এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল শাসন করতে পারে। সেই লক্ষ্যে বিজেপি ঘুঁটিও সাজাচ্ছে অনেক দিন ধরে।
রাজ্য দ্বিখণ্ডীকরণ ও ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর কেন্দ্রের জম্মু–কাশ্মীরের বিধানসভা ও লোকসভা কেন্দ্রের পুনর্বিন্যাসে মন দেয় বিজেপি সরকার। রাজ্যের বিদায়ী বিধানসভা থেকে বাদ পড়ে যায় লাদাখের চারটি আসন। বিধানসভায় জম্মু–কাশ্মীরের জন্য থাকে ৮৩ আসন। পুনর্বিন্যাসের পর তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯০টি। আগে জম্মুর জন্য ছিল ৩৭টি, কাশ্মীরের জন্য ৪৬। সীমানা পুনর্বিন্যাসের পর জম্মুর আসন বেড়ে হয় ৪৩, কাশ্মীরের ৪৭। এর ফলে দুই অঞ্চলের আসন পার্থক্য ৯ থেকে কমে হলো ৪। আগে জম্মুর ৩৭ আসনের মধ্যে হিন্দুপ্রধান কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ২৪, মুসলমানপ্রধান কেন্দ্র ১৩। কেন্দ্র পুনর্বিন্যাসের ফলে জম্মুর ৪৩টি আসনের মধ্যে হিন্দুপ্রধান কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়ে হলো ৩৪, মুসলমানপ্রধান কেন্দ্রের সংখ্যা কমে দাঁড়াল ৯। বিজেপির হিসাব হলো এই ৩৪ হিন্দুপ্রধান কেন্দ্রের মধ্যে ৩০টি পেলেই তারা সরকার গঠনের অধিকারী হবে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর প্রথমবারের মতো বিজেপির বদৌলতে হিন্দু মুখ্যমন্ত্রী পাবে জম্মু–কাশ্মীর।
বিজেপি মনে করছে, এই কাজে তাদের বড় সহায়ক হবেন গুলাম নবী। কারণ, জম্মু অঞ্চলের ডোডা, পুঞ্চ ও রাজৌরির মুসলমানপ্রধান এলাকায় তিনি ভোট ভাগাভাগি করলে বিজেপির জয় সহজ হবে। তা ছাড়া উপত্যকাতেও তাঁর দল কিছুটা প্রভাব ফেলবে। বিজেপির উদ্যোগে গঠিত ‘আপনি পার্টির’ নেতা আলতাফ বুখারি ইতিমধ্যেই গুলাম নবীকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, তাঁর দলের সঙ্গে হাত মেলাতে প্রস্তুত তাঁরা।
প্রশ্ন হলো, বিজেপির এই রাজনৈতিক অঙ্ক গুলাম নবী সফল হতে দেবেন কি না। এই প্রশ্নের নিশ্চিত জবাব এই মুহূর্তে নেই। তবে বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে যেভাবে তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল, তাতে কোনো কোনো মহল মনে করছে, তেমন হলে গুলাম নবীকেও মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে। রাজনৈতিক দিক থেকে সেটাও হবে নরেন্দ্র মোদির জয়। কারণ, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পর প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে জানিয়ে ছিলেন, জম্মু–কাশ্মীরকে তিন পরিবারের মুঠো থেকে তিনি মুক্ত করতে চান। সেই তিন পরিবার হলো আবদুল্লাহ, মুফতি ও গান্ধী। এসব কারণে জম্মু–কাশ্মীর ঘিরে এই মুহূর্তে সবার নজর গুলাম নবী আজাদের দিকে।