বিতর্কের মধ্যেই শেষ হলো মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য আজ শনিবার পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হলো। দুপুরে লালকেল্লার পেছনে যমুনা নদীর ধারে নিগমবোধ ঘাট শ্মশানে সেই অনুষ্ঠানে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ দেশের বিশিষ্ট নেতারা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সাত দিন রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই সাত দিন দেশের সর্বত্র ভারতের রাষ্ট্রীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। বিদেশে ভারতের সব দূতাবাসেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। প্রতিবেশী দেশ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোগবে ও মরিশাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধনঞ্জয় রামফুল এসেছিলেন প্রয়াত নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে। ভারতে অবস্থিত ভুটান ও মরিশাসের দূতাবাস ও উপদূতাবাসগুলোতেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই দুই দেশের সরকার।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫১ মিনিটে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসে (এইমস) প্রবীণ এই রাষ্ট্রনায়কের মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২।
আজ শনিবার সকালে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কংগ্রেস সদর দপ্তরে। সেখান থেকে সেনা শকটে যমুনাতীরবর্তী নিগমবোধ ঘাটে। প্রয়াত নেতার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও শোকযাত্রায় সঙ্গী হন। নিগমবোধ ঘাটে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সোনিয়া, রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ দলীয় নেতৃত্ব এবং সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধার্পণ করেন।
মনমোহন সিংয়ের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডাও। তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস দপ্তরে গিয়ে দলের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান।
তবে এই পরিস্থিতিতেও কংগ্রেসের সঙ্গে সরকারের বিরোধ দেখা দেয়। গতকাল শুক্রবার কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সরকারকে জানানো হয়, যমুনাতীরবর্তী রাজঘাটের আশপাশে চিহ্নিত কোনো জমিতে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হোক, যেখানে কংগ্রেস তাঁর স্মৃতিসৌধ তৈরি করবে। একই দাবি জানান শিরোমনি অকালি দলের নেতা সুখবীর সিং বাদল।
দুই দলের নেতাদের দাবি, দেশের একমাত্র শিখ প্রধানমন্ত্রীর জন্য উপযুক্ত স্থানের ব্যবস্থা করা হোক, যেখানে তাঁর শেষকৃত্যও সম্পন্ন হবে। কিন্তু সরকার এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। তবে জানানো হয়, মনমোহন সিংয়ের জন্য স্মৃতিসৌধ তৈরির উপযুক্ত স্থান সরকার ঠিক করে দেবে। সে জন্য কিছুটা সময় লাগবে। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর অন্তিম কাজ নিগমবোধ ঘাটেই করা হোক।
বিজেপি অবশ্য এই জন্য কংগ্রেসের সমালোচনা করতে ছাড়েনি। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, দিল্লিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাওয়ের সমাধিস্থল গড়তে কংগ্রেসকে কখনো উদ্যোগী হতে দেখা যায়নি। তা ছাড়া যমুনাতীরবর্তী রাজঘাটসংলগ্ন এলাকায় রাষ্ট্রীয় নেতাদের সমাধিক্ষেত্র তৈরির প্রথা ২০১৩ সালে মনমোহন সিংয়ের সরকারই তুলে দিয়েছিল। যুক্তি ছিল স্থানাভাবের।