সীমান্তে টহলরত ভারতীয় জওয়ানদের শেখানো হবে চীনা ভাষা

হিমালয়ের চীন সীমান্তে পাহারায় ভারতীয় জওয়ানরা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

হিমালয়ের পাদদেশে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর টহলরত ভারতীয় জওয়ানদের এবার চীনা ভাষা শেখানো হবে। চীনা ফৌজদের সঙ্গে বার্তা বিনিময় ও তাঁদের মোকাবিলায় ভাষা যাতে সমস্যা বা প্রতিবন্ধক না হয়, তা নিশ্চিত করা এই ভাষা শেখানোর লক্ষ্য।

আসাম রাজ্যের তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিগগিরই এই প্রশিক্ষণ শুরু করা হবে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে এক অনুচুক্তি সই হয়েছে। গত বুধবার সেনাবাহিনীর পক্ষে এক বিবৃতিতে এ খবর জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় জওয়ানদের মান্দারিন ভাষা (চীনের অধিকাংশ মানুষের ভাষা) শেখাতে ১৬ সপ্তাহের এক ‘ক্র্যাশ কোর্স’ শিগগিরই চালু করা হবে। জওয়ানদের পাশাপাশি অফিসারদেরও ওই ভাষা শিখতে হবে।

আসাম চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৯৪ সালে তেজপুরে এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। চীনের মান্দারিন, তিব্বতি ভাষাসহ অনেক বিদেশি ভাষা শিক্ষার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রসিদ্ধ।

সেনা বিবৃতি অনুযায়ী, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর মোতায়েন সেনারা মান্দারিন ভাষা শিখলে চীনের লাল ফৌজদের সঙ্গে বার্তাবিনিময় সহজ হবে। তাঁদের বোঝা, তাঁরা কী বলতে চাইছেন অনুধাবন করা যেমন সহজ হবে, তেমনি ভারতীয় জওয়ানরা কী বোঝাতে চাইছেন, তা–ও সহজে প্রকাশ করা যাবে। সংকট কিংবা উত্তেজনার সময় এই ভাষা শিক্ষা কাজে দেবে। দুই দেশের পতাকা বৈঠক বা সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে ভাষাজ্ঞান সুবিধাজনক হবে।

১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারত-চীন সীমান্ত মোটামুটি শান্ত ছিল। কোথাও অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। ২০১৪ সালে বিজেপি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে আসার পর পরিস্থিতির বদল হতে থাকে ধীরে ধীরে। ২০১৭ সালে ভারত-চীন-ভুটানের ত্রিদেশীয় সীমান্ত অঞ্চল দোকলামে চীনা ফৌজের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দেয়। ভারতীয় জওয়ানদের প্রতিরোধের মুখে চীনা ফৌজ শেষ পর্যন্ত পিছু হটে। তিন বছর পর ২০২০ সালের জুনে পূর্ব লাদাখের গলওয়ান এলাকায় ভারত ও চীনা ফৌজের মধ্যে ঘটে যায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। দুই পক্ষে বহু হতাহত হন। তখন থেকে পরিস্থিতি এখনো সহজ ও স্বাভাবিক হয়নি।

ভারতের পক্ষ থেকে চীনকে বারবার বলা হয়েছে, সীমান্ত পরিস্থিতি ঠিক না হলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কখনো স্বাভাবিক হতে পারবে না। তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় জওয়ানদের মান্দারিন ভাষা শিক্ষার কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যেই, যাতে ভাষার আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে পরস্পরকে জানা ও বোঝা সহজতর হয়।

আসামের উত্তরে শোনিতপুর জেলার তেজপুর থেকে অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী ইটানগরের দূরত্ব মাত্র ১৪৫ কিলোমিটার। অরুণাচল প্রদেশকে চীন তাদের এলাকা বলে দাবি করে। এ নিয়ে উত্তেজনা অব্যাহত। ভারতীয় সেনাবাহিনীকে তিব্বতের ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতির পাঠ দেওয়া শুরু হয় ২০২১ সালে। তাগিদ ছিল তিব্বতে চীনা প্রভাবের মোকাবিলা করা। চীন সীমান্তে সামরিক অবকাঠামো নির্মাণে জোর দেওয়ার পাশাপাশি এবার শুরু হতে চলেছে কর্মকর্তা ও জওয়ানদের মান্দারিন ভাষা শিক্ষাদান, সীমান্তবর্তী চীনা ফৌজের মোকাবিলা যাতে সহজে করা যায়।