ভারতে মানবাধিকারকর্মী নাদিম, সাংবাদিক জুবেরকে হেনস্তার ঘটনায় এইচআরডব্লিউর বিবৃতি
ভারতে ভুয়া সংবাদ রোধে কাজ করা সংস্থা ‘অল্ট নিউজে’র অন্যতম পরিচালক মহম্মদ জুবের এবং একটি মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটসের (এপিসিআর) জাতীয় সাধারণ সম্পাদক নাদিম খানকে হেনস্তা করার ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
বিবৃতিতে নাদিম খানের প্রসঙ্গে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়ার পরিচালক ইলেইন পিয়ারসন বলেছেন, এটা সম্ভবত আশ্চর্যজনক নয় যে দিল্লি পুলিশ একটি সংস্থার দপ্তরে তল্লাশি চালিয়েছে। কারণ, গত এক দশকে এ ধরনের কাজ করার রেকর্ড বিজেপি সরকারের রয়েছে। বিশেষত যখন মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হয়। প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা চালানোর পরিবর্তে দেখা যাচ্ছে সরকার বার্তাবাহককে শাস্তি দিচ্ছে।
গত ২৯ নভেম্বর দিল্লিতে এপিসিআরের দপ্তরে পুলিশ রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযান চালায় বলে মন্তব্য করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থা আরও বলেছে, মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার সমালোচনা যাঁরাই করেন, তাঁদের বিরুদ্ধেই সরকার খড়্গহস্ত হয়ে ওঠে।
বিবৃতিতে বলা হয়, পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এপিসিআরের একটি প্রদর্শনীর কারণে এ কাজ করা হয়েছে। তাদের কাছে আসা একটি অভিযোগে বলা হয়েছিল, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মুসলমান সমাজকে কী ধরনের প্ররোচনার মুখে পড়তে হয়েছে, তা এই প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছিল। এ কারণে সংস্থার সম্পাদক নাদিম খানকে আটকে রাখা হয়।
সাংবাদিক মহম্মদ জুবেরের প্রসঙ্গে ইলেইন পিয়ারসন বিবৃতিতে বলেন, মনে হচ্ছে ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, তাদের বিদ্বেষপূর্ণ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে যাঁরা কথা বলবেন, তাঁদের কণ্ঠ রোধ করা হবে। যেসব মানুষ অপতদন্তের শিকার হচ্ছেন, তাঁদের পাশে যাঁরা দাঁড়াবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানুষকে তাদের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার প্রয়োগের জন্য শাস্তি দিয়ে সরকার মানুষের মুখ বন্ধ করতে পারছে না, বরং সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের তালিকা ক্রমশ বাড়ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে বলা হয়, জুবের কিছুদিন আগে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন, যেখানে দেখানো হয়েছে, হিন্দুধর্মীয় নেতা ইয়াতি নরসিংহানন্দ ২৯ সেপ্টেম্বরের একটি বক্তৃতায় নবী মুহাম্মদ (সা.)–এর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। নরসিংহানন্দ বারবার মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছেন এবং ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ‘ইসলামোফোবিক’ এবং অশ্লীল মন্তব্য করায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তিনি এক মাস কারাগারে ছিলেন।
নরসিংহানন্দের ভাষণের ভিডিও প্রকাশ করে ভারতের ‘সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে আঘাতপ্রাপ্ত’ করেছেন—উত্তর প্রদেশ পুলিশ মহম্মদ জুবেরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনেছে। গতকাল মঙ্গলবার উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতিরা মামলাটি শুনতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, মামলাটিকে অন্য বেঞ্চে নিয়ে যেতে হবে।
জুবেরের একটি সাক্ষাৎকার উদ্ধৃত করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও বলেছে, ওই সাক্ষাৎকারে জুবের বলেছিলেন, তিনি ওই ভিডিও প্রচার করার আগে অনেকেই তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করেছিলেন।