কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষের পেশাগত লাইসেন্স বাতিল
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজের অপসারিত অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের পেশাগত লাইসেন্স (মেডিকেল লাইসেন্স) গতকাল বৃহস্পতিবার বাতিল করা হয়েছে।
মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটির এক শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার ঘটনায় সন্দীপ ঘোষকে প্রথমে অপসারণ করা হয়। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রবল দাবির মুখে এখন তাঁর পেশাগত লাইসেন্স বাতিল করল রাজ্যের মেডিকেল কাউন্সিল। এই সিদ্ধান্ত গতকালই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মেডিকেল কাউন্সিল জানিয়ে দেয়।
গত ৯ আগস্ট আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসক ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হন। এ ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গে কর্মবিরতি শুরু করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা।
৪২ দিন ধরে চলা জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি গতকাল আংশিক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জুনিয়র চিকিৎসকনেতারা বলেন, আগামীকাল শনিবার থেকে তাঁরা হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগের কাজে যোগ দেবেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সচল রাখতে তাঁরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া বন্যা পরিস্থিতির কথাও তাঁরা বিবেচনায় নিয়েছেন। তবে ন্যায়বিচার না হওয়া পর্যন্ত, সব দাবি মানা না পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন জারি রাখবেন। প্রয়োজনে তাঁরা আবার পূর্ণ কর্মবিরতির ডাক দেবেন।
আপাতত জুনিয়র চিকিৎসকেরা অপেক্ষা করবেন ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সেদিন ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার পঞ্চম দফার শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে।
এ ছাড়া কলকাতার সল্টলেকে রাজ্য স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বিভিন্ন দাবিতে ১০ দিন ধরে চলা অবস্থান কর্মসূচিও প্রত্যাহারের ঘোষণা গতকাল দিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা।
ধর্ষণ-হত্যার ঘটনাটি তদন্ত করছে ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সংস্থাটি এই মামলার তদন্তভার পায়। তারাই সন্দীপ ঘোষকে গ্রেপ্তার করে। ২ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সিবিআইয়ের হেফাজতে আছেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট টালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিজিৎ মণ্ডলকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আর জি কর-কাণ্ডের জেরে সন্দীপ ঘোষের চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন আন্দোলনকারীরা। এ জন্য তাঁরা পশ্চিমবঙ্গ মেডিকেল কাউন্সিলে আবেদন জানান।
কাউন্সিলের সভাপতি তৃণমূল কংগ্রেস-সমর্থিত চিকিৎসকনেতা সুদীপ্ত রায়। কাউন্সিল ৬ সেপ্টেম্বর সন্দীপ ঘোষকে শোকজ করে। তাঁর কাছ থেকে সন্তোষজনক জবাব পায়নি কাউন্সিল। দুর্নীতি, ধর্ষণ, হত্যার প্রমাণ লোপাটসহ অন্যান্য অভিযোগ এনে গতকাল তাঁর চিকিৎসার লাইসেন্স বাতিল করে কাউন্সিল।
চিকিৎসার লাইসেন্স বাতিল হওয়ায় এখন থেকে সন্দীপ ঘোষ তাঁর নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবেন না। পারবেন না কোনো চিকিৎসাপত্র (প্রেসক্রিপশন) লিখতেও।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি মেনে ইতিমধ্যে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (নর্থ) অভিষেক গুপ্ত, রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশীষ হালদার, স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েককে অপসারণ করেছে। এখন দাবি উঠেছে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবকেও অপসারণ করার।