ভোটের দিন ও পরে ইসির দেওয়া হারের ব্যবধানে শঙ্কা বাড়ছে বিরোধীদের
পঞ্চম দফার ভোট পর্ব শেষ হওয়ার পর থেকে বিজেপি নেতাদের মুখে ‘চার শ পার’-এর দাবি তেমন একটা শোনা যাচ্ছে না। তবে কমবেশি ৩০০ আসন জিতে নরেন্দ্র মোদিই যে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন, সেই দাবি বিজেপি নেতারা জোরের সঙ্গে করছেন। পাশাপাশি উজ্জীবিত বিরোধীদের দাবি, ৪ জুনের পর নরেন্দ্র মোদি আর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না। সরকার গঠন করবে ‘ইন্ডিয়া’ জোট।
বিরোধীদের এই আশার মধ্যেই কাঁটা হিসেবে খচখচ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের ‘ভূমিকা’ ও ইভিএমের ‘চরিত্র’ সম্পর্কে বিরোধীরা নিশ্চিত হতে পারছে না। সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতে পারছে না কমিশনকে।
বিরোধীদের চোখে নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই সরকারের ‘অন্ধ অনুগত ও পক্ষপাতদুষ্ট’। কমিশন আজও সেই অপবাদ খণ্ডাতে পারেনি। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক ও ঘৃণাভাষণের একাধিক অভিযোগ আনলেও কমিশন তা অপরাধ বলে মনে করেনি।
এবারও মোদির বিরুদ্ধে সেই একই ধরনের অভিযোগ ইসি আমলে নিল না। অভিযোগের জবাবি চিঠিতে ইসি প্রধানমন্ত্রীর নাম পর্যন্ত নেয়নি। ইসি তার নিয়োগকর্তার (প্রধানমন্ত্রী) বিরুদ্ধাচরণ করবে, এই আশাও বিরোধীরা করে না। বরং প্রত্যেকের অভিযোগ, কীভাবে শাসকদলের সুবিধা হয়, ইসি সেটাই দেখে চলেছে। দুই মাস ধরে সাত দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যও তা।
এ অবস্থায় ভোটের হারে বিপুল ফারাক বিরোধীদের শঙ্কিত করছে। শঙ্কা, ইভিএমে কারচুপি ঘটানোর। ভোটের হারের বিপুল ‘অসংগতির’ বিরুদ্ধে বিরোধী নেতারা সরব হয়েছেন। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ নিয়ে কমিশন নির্বিকার।
ভোট গ্রহণের দিন ইসি ভোটের যে হার জানাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে চূড়ান্ত হার তার চেয়ে ৫-৬ শতাংশ বেশি। কী করে এটা হতে পারে, বিরোধীরা সেই প্রশ্ন তুললেও কমিশন এখনো গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। কংগ্রেসসহ সব বিরোধী দল এই প্রশ্নই বড় করে তুলে ধরেছে। তাদের শঙ্কা, ভোটের হারে কারচুপি ঘটিয়ে কমিশন শাসকের সুবিধা করে দিতে ব্যগ্র। সেই লক্ষ্যে ইভিএমেও কারচুপি করা হতে পারে।
ভোটের ফলে কারচুপির আশঙ্কা নিয়ে মামলাও হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে আগামীকাল শুক্রবার সেই মামলার শুনানি। আবেদনকারীদের অভিযোগ, কোন বুথে কত ভোট পড়েছে, সেই তথ্য ইসি তাদের ওয়েবসাইটে দিচ্ছে না। ফলে ভোটের হার জানা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে গতকাল বুধবার নতুন এক হলফনামা পেশ করে ইসি সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, ভোট গ্রহণের রেকর্ড, যা কিনা ‘১৭ সি ফর্ম’-এর অন্তর্ভুক্ত, তা ওয়েবসাইটে দিলে কারচুপি ও অপব্যবহার হতে পারে। সেই কারণে ওই ফর্ম শুধু প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের দেওয়া হয়। সবার জন্য প্রকাশ্যে দেওয়া হয় না। এটাই রীতি। কাল শুক্রবারের শুনানিতে বোঝা যাবে, সন্দেহ ও সংশয় দূরীকরণে সুপ্রিম কোর্ট কী বলেন।
ভোটের হার নিয়ে বিরোধীরা প্রবল চাপে রেখেছে কমিশনকে। কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, ভোটের দিন ইসির দেওয়া হারের প্রাথমিক হিসাবের সঙ্গে চূড়ান্ত হারের ফারাক বিস্তর। প্রথম চার দফার ভোটের পর ওই পার্থক্য বিস্ময়কর! ইসির প্রাথমিক হিসাবের চেয়ে চূড়ান্ত হারে ফারাক মোট ১ কোটি ৭ লাখ। এই হারও প্রথম জানানো হয় প্রথম দফার ভোটের ১১ দিন পর। কংগ্রেস বলছে, এতে দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রপ্রতি ভোট বাড়ছে গড়ে ২৮ হাজারের মতো।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ গতকাল বলেছেন, এটা বিরাট অসংগতি। যেসব রাজ্যে বিজেপির খারাপ ফলের সম্ভাবনা বেশি, সেখানে ভোটের হারের অসংগতিও বেশি। আরেক নেতা পবন খেরা বলেন, ১ কোটি ৭ লাখ ভোটের ফারাক কীভাবে হয়, কেউ জানে না। হারিয়ে যাওয়া ইভিএম নিয়েও প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। চিন্তা সব দিক থেকে। সবার দৃষ্টি কাল শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রতি।
এ অবস্থায় কর্ণাটকের ১২০টির বেশি নাগরিক সংগঠন একজোট হয়ে প্রচারে নেমেছে। ভোট গণনার দিন কী করে কারচুপি রোখা যায়, সে বিষয়ে তারা জনগণকে শিক্ষিত ও সজাগ করে তুলছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তারা এ নিয়ে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগীদের মধ্যে রয়েছেন অর্থনীতিবিদ পরকাল প্রভাকর, যিনি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের স্বামী।