আসামে পুনরায় শুরু বাঙালি উচ্ছেদ, মুসলমানদের জন্মনিয়ন্ত্রণের বার্তা
পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যে আবার বাঙালি-অধ্যুষিত অঞ্চলে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছে আসাম মানবাধিকার কমিশন।
অন্যদিকে মুসলমান সম্প্রদায়কে জন্মনিয়ন্ত্রণ করার বার্তা দিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
আসাম সরকার গত সোম ও মঙ্গলবার মধ্য আসামের নওগাঁও জেলার বটদ্রবায় প্রায় দেড় বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে দখল হয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধারে অভিযান চালায়। এক হাজার পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আসাম পুলিশ।
আসামে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার ক্ষমতায় আসার পর ধারাবাহিকভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। এই উচ্ছেদ অভিযান প্রধানত চলছে সেই সব এলাকায়, যেখানে বাস করছে বাঙালি মুসলমান সম্প্রদায়।
সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী আসাম বিধানসভায় জানিয়েছিলেন, গত এক বছরে ৪ হাজার ৪৪৯টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন এর সঙ্গে আরও এক হাজার পরিবার যুক্ত হলো। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে উত্তর আসামের দরং জেলায় এই ধরনের উচ্ছেদ অভিযানে গুলি চালানো হয়েছিল। এতে মারা যান ২ জন এবং আহত হন অন্তত ২০ জন।
সোমবার থেকে শুরু হওয়া অভিযানে কয়েক হাজার মানুষকে পুনরায় ঘরছাড়া করা হয়েছে। নওগাঁ জেলার পুলিশপ্রধান লীনা দোলে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘গত অক্টোবর মাসেই দখল করা জমি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের তরফে জমিতে বসবাসকারীদের বলা হয়। এক হাজার পরিবারকে চলে যেতে বলা হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা জমি না ছাড়ায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে হলো।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ উচ্ছেদ হওয়া পরিবারের অধিকাংশই মুসলমান। তাঁরা কয়েক দশক ধরে বটদ্রবায় বসবাস করছিলেন। তাঁরা ভারতের নাগরিক নাকি অনুপ্রবেশকারী, সে সম্পর্কে সরকার নির্দিষ্টভাবে কিছু জানায়নি।
আসামের মানবাধিকার কমিশন বটদ্রবার উচ্ছেদ নিয়ে নওগাঁ ও জেলা প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন চেয়ে পাঠিয়েছে। জানুয়ারি মাসের ১৮ তারিখের মধ্যে এই প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিতে বলা হয়েছে।
মুসলমানদের জন্মনিয়ন্ত্রণের বার্তা
উচ্ছেদ সম্পর্কে বলতে গিয়ে হিমন্ত বিশ্বশর্মা আসাম বিধানসভায় বুধবার বলেন, হিন্দু বা মুসলমান যে সম্প্রদায়েরই মানুষ হন না কেন, ‘সত্র’ জমি ছাড়তে হবে। ‘সত্র’ জমির অর্থ হলো এমন জমি, যেখানে বৈষ্ণব ধর্মের থান ও মঠ-মন্দির রয়েছে। বটদ্রবায় সাধক-পণ্ডিত শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের বাসস্থান রয়েছে বলে মনে করা হয়।
একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা আরও ইঙ্গিত দেন যে আগামী দিনে মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্মনিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেওয়া হবে।
তিনি বিধানসভায় বলেন, ‘নিম্ন আসামের মানুষ যদি জন্মনিয়ন্ত্রণ না করেন, তাহলে আগামী ৫০ বছরে আমাদের পক্ষে আসামে থাকা মুশকিল হবে। দেখা যাচ্ছে একেকটি পরিবারে ৮ থেকে ১২টি করে সন্তান হচ্ছে।’
আসামসহ গোটা ভারতে সাধারণ মানুষ অবগত যে নিম্ন আসামে প্রধানত মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন।
আসামের মুখ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্য সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিলচরে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, খুব স্পষ্টভাবেই বলা যায়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একটি নির্দিষ্ট ধর্ম এবং সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে এই কথা বলেছেন। বিদেশে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হতো এই ধরনের ‘রেশিয়াল প্রোফাইলিং’-এর জন্য, এখানে কিছুই হবে না। মুখ্যমন্ত্রীও বুঝে গেছেন আসামে ও ভারতে তাঁদের কোনো বিরোধীপক্ষ নেই। আর এ ধরনের মন্তব্য এবং বাঙালি মুসলমানবিরোধী কাজকর্মের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে আসামে নির্বাচনে জেতা সম্ভব।
বিরোধী কংগ্রেস দল বটদ্রবায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।