শাহরুখের ছেলেকে গ্রেপ্তারকারী সেই বানখেড়ে মুম্বাইয়ে ৪ ফ্ল্যাটের মালিক
শাহরুখ খানের ছেলে আরিয়ান খানকে গ্রেপ্তারকারী সাবেক মাদকবিরোধী কর্মকর্তা সমীর বানখেড়ে সপরিবার বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছেন। এ ছাড়া আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, এমন অঢেল সম্পদেরও মালিক তিনি। ভারতের মাদক নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর (এনসিবি) এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) সমীর বানখেড়েকে নিয়ে তদন্ত করছে। এনসিবির একটি প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে সিবিআই তাদের মামলা করেছে। প্রতিবেদনটির একটি প্রতিলিপি হাতে পেয়েছে এনডিটিভি।
এনসিবির প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, বানখেড়ে এবং আরও কয়েকজন মিলে শাহরুখ খানের পরিবারের কাছ থেকে ২৫ কোটি রুপি ঘুষ চেয়েছিলেন। ঘুষ না দেওয়া হলে শাহরুখের ছেলে আরিয়ানকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তাঁরা।
এনসিবির নজরদারি বিভাগের তৈরি করা প্রতিবেদনে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে শেষ মুহূর্তে আরিয়ান খান ও তাঁর বন্ধু আরবাজ মারচেন্টের নাম সন্দেহভাজনের তালিকায় ঢোকানো হয়েছিল। অন্য কয়েকজন সন্দেহভাজনের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এক সন্দেহভাজনের কাছ থেকে রোলিং পেপার (মাদক গ্রহণের সুবিধার্থে ব্যবহৃত কাগজ) উদ্ধার হওয়ার পরও তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
একটি তদন্তকারী দল এনসিবি কার্যালয়ের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। দেখা গেছে, এনসিবির মুম্বাই দল আরিয়ানকে এনসিবি কার্যালয়ে নেওয়ার রাতের যে ভিডিও জমা দিয়েছে, তার সঙ্গে এ ভিডিওর মিল নেই।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সমীর বানখেড়ে ছয়বার সপরিবার বিদেশ সফর করেছেন। তিনি যেসব দেশ সফর করেছেন, তার মধ্যে আছে যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও মালদ্বীপ। এসব দেশে তিনি ৫৫ দিন ছিলেন। বানখেড়ের দাবি, বিদেশ সফর বাবদ তিনি মাত্র ৮ লাখ ৭৫ হাজার রুপি খরচ করেছেন। অথচ এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে শুধু বিমান ভাড়ার খরচই মেটানো সম্ভব।
এনসিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সমীর বানখেড়ের কাছে বেশ কিছু দামি ঘড়ি এবং কিছু দামি জিনিস পাওয়া গেছে, যা তাঁর জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এর মধ্যে একটি রোলেক্স ঘড়িও আছে, যা তিনি কমপক্ষে ১৭ লাখ থেকে ২২ লাখ রুপি দিয়ে কিনেছেন।
মুম্বাই শহরে বানখেড়ের চারটি ফ্ল্যাট আছে। মহারাষ্ট্রের ওয়াসিম এলাকায় ৪১ হাজার ৬৮৮ একর জমির মালিক তিনি।
এনসিবির কাছে সমীর বানখেড়ে দাবি করেছেন, গুরগাঁওতে অবস্থিত তাঁর পঞ্চম ফ্ল্যাটটি কিনতে তিনি ৮২ লাখ ৮০ হাজার রুপি খরচ করেছেন। অথচ ফ্ল্যাটটির মূল্য ২ কোটি ৪৫ লাখ রুপি।
বিয়ের আগেও তিনি এবং তাঁর স্ত্রী ১ কোটি ২৫ লাখ রুপি খরচ করে একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ অর্থের উৎস জানা যায়নি।
সমীর বানখেড়ে এবং তাঁর স্ত্রীর দাখিল করা আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী, তাঁদের বার্ষিক আয় ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৪৬০ রুপি। কোথা থেকে তাঁরা বিদেশ ভ্রমণ এবং অন্যান্য জিনিসের খরচ জোগাড় করেছেন, সে ব্যাপারে রিটার্নে কিছু ব্যাখ্যা করা হয়নি।
দুই বছর আগে ২০২১ সালে মুম্বাইয়ে এনসিবির আঞ্চলিক প্রধান ছিলেন সমীর বানখেড়ে। ওই সময় মুম্বাই থেকে গোয়াগামী একটি বিলাসবহুল প্রমোদতরিতে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে আটক করেন ভারতের এনসিবির কর্মকর্তারা। তাঁদের অভিযোগ, সেখানে মাদক পার্টি চলছিল। আটক ১০ জনের মধ্যে শাহরুখপুত্র আরিয়ান খানও ছিলেন।
মাদকের ঘটনায় আরিয়ানের খানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। প্রায় তিন সপ্তাহ জেল খাটতে হয়েছিল শাহরুখের ছেলেকে। পরে অবশ্য জামিনে মুক্তি পান। ওই ঘটনায় ভারতসহ বিশ্বে আলোচনা হয়েছিল।
কিন্তু সেই বছরের (২০২১) নভেম্বরে এ ঘটনা নতুন মোড় নেয়। বানখেড়ে মামলাটি ভুলভাবে পরিচালনা করেছেন বলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। এমনকি তাঁকে মুম্বাই জোনের এনসিবির প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই সেই মামলাসহ আরও ছয়টি তদন্তাধীন মামলা বানখেড়ের কাছ থেকে নিয়ে বিশেষ তদন্ত দলকে দেওয়া হয়।